প্রায় ১৭০ বছরের পুরনো বাড়িতে রাখা ৪০ জন পড়ুয়ার খাতা কেটেছিল উইয়ে। এর পরে ভবন সংস্কারের উদ্যোগী হল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। তবে খাতা নষ্ট হওয়া পরীক্ষার্থীদের নম্বর কী পদ্ধতিতে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গিয়েছে। এই বিভ্রাটের জেরে পরীক্ষার পরে প্রায় পাঁচ মাস কাটলেও ফল কবে প্রকাশিত হবে, তা নিয়ে সংশয়ে খোদ পরীক্ষা নিয়ামক দফতর।
পরীক্ষার পরে বিভিন্ন কলেজ থেকে আসা উত্তরপত্র রাখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটী ভবনে পরীক্ষা নিয়ামক দফতরের ‘এপি সেকশন’-এ। গত জুনে স্নাতক স্তরে কলা বিভাগের পার্ট ১ পরীক্ষা শেষ হয়। তার পর থেকে উত্তরপত্রগুলি ওই সেকশনে ছিল। পুজোর আগে পার্ট ৩-এর ফল বেরোয়। তার পরে পার্ট ১-এর উত্তরপত্র পরীক্ষকদের কাছে পাঠানোর কথা ছিল।
সেই উত্তরপত্রগুলি নামাতে গিয়ে দেখা যায় স্নাতক স্তরের পার্ট ১ পরীক্ষার দর্শনের ৪০টি খাতা উইয়ের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, কলেজসমূহের পরিদর্শক ও সহকারী পরীক্ষা নিয়ামককে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি তৈরি হয়।
কয়েক দিন আগে, উপাচার্য নিমাই সাহা ও অস্থায়ী পরীক্ষা নিয়ামক সুজিত চৌধুরী ‘এপি সেকশন’ পরিদর্শন করেন। সেখানেই দেখা যায়, শুধু উইয়ের আক্রমণ রোখাই নয়, ছাদ থেকে জল পড়াও আটকাতে হবে। এপি সেকশনের এক কর্তা বলেন, “ওই পরিদর্শনের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়াররা এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন।’’ বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার হিতেন বর্মন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি রিপোর্ট জমা দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সেই রিপোর্টে তিনিও জানান, দেওয়াল ও মাটি খুঁড়ে উই নিধনের ওষুধ দিতে হবে। কিন্তু চুন-সুরকির গাঁথনি থাকায় তার পরেও উই ধরার সম্ভাবনা থাকে। তাই দেওয়াল ও মেঝে মার্বেলে মুড়ে দেওয়ার প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ছাদের সংস্কারের পাশাপাশি পুরনো আসবাবপত্রও ওই সেকশনে রাখা যাবে না বলে জানানো হয়েছে।
গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতিতে আলোচনার পর ঠিক হয়েছে, পাঁচ হাজার বর্গ ফুটের পুরো এপি সেকশনই সংস্কার করা হবে। এর জন্য প্রাথমিক পর্বে প্রায় ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দফতের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “আপাতত দু’টি ঘর খালি করা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়াররা জানান, তিন মাসের মধ্যে সেকশনটিকে সংস্কার করা হবে।” উইপোকা হাত থেকে উত্তরপত্র বাঁচাতে ‘এপি সেকশন’ সংস্কারের পাশাপাশি আধুনিক আসবাবপত্রও আসতে চলেছে। ‘এপি সেকশনের’ হাল ফিরছে, কিন্তু পরীক্ষার্থীদের কী হবে?
নিয়ামক দফতরের এক কর্তা বলেন, “আপাতত ঠিক হয়েছে, পরীক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে, তাঁরা পাসকোর্সের যে বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পাবেন, দর্শনের ক্ষেত্রেও সেই নম্বরই দেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ার পরেই ফল বের করা হবে।”
ভবন সংস্কারের খবর পেয়ে অনেকেরই টিপ্পনি, ‘‘যাই হোক, শেষমেশ উই-ভবনের সংস্কার হবে।’’