কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকেই। নিজস্ব চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণার পরে, সংশ্লিষ্ট লোকজনের মুখে ঘুরে-ফিরে আসছে দিল্লির কৃষক আন্দোলনের কথা।
শুক্রবার ছিল গুরুনানকের জন্মজয়ন্তী। বার্নপুর গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির সম্পাদক তথা ‘প্রগ্রেসিভ ফার্মারস ফ্রন্ট’-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সুলেন্দ্র সিংহ বলেন, “এই ঘোষণার ফলে, আমাদের আনন্দ আজ দ্বিগুণ হয়েছে। দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও কৃষকদের আত্ম-বলিদান সার্থক হল।”
সুলেন্দ্র ফিরে যান গত এপ্রিলে, দিল্লির রাজপথে। বলেন, সত্তরোর্ধ্ব বলজিৎ সিংহের কথা। সুলেন্দ্র বলেন, “বলজিৎ রোদ সহ্য করতে না পেরে মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। শিবিরে তুলে আনা হল ওঁকে। মুখে জলের ঝাপটা দেওয়া হল। একটু ধাতস্ত হওয়ার পরেই উনি বললেন, ‘এ ভাবে মরে যেতে আপত্তি নেই। কিন্তু আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত থামব না’।” ফের ছ’জনের একটি দলকে নিয়ে আগামী ২৬ নভেম্বর দিল্লিতে যাওয়ার কথা ছিল সুলেন্দ্রর। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের চাষিদের একজোট করার দায়িত্ব ছিল আমাদের উপরে। সে কাজে আমরা সফল।”
চাষাবাদের সঙ্গে কোনও রকম সম্পর্ক নেই চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কসের (সিএলডব্লিউ) দুই শ্রমিক নেতা অসীম মান্না ও অমিত মালেঙ্গার। কিন্তু শুধু চাষিদের পাশে থাকতে, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দিল্লির রাজপথে পড়ে থেকেছেন তাঁরা। অসীম এ দিন বলেন, “গত বছর ডিসেম্বরে টিকরি সীমানা লাগোয়া এলাকায় পৌঁছই। রাত তখন গভীর। খুব মনে পড়ছে কর্তার সিংহের কথা।” আন্দোলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন শুনে, সুঠামদেহী কর্তার তাঁবু খাটিয়ে বালিশ, কম্বল বিছিয়ে দিয়েছিলেন। অমিত জানান, তাঁরা চিত্তরঞ্জন থেকে নাগাড়ে তিন দিন মোটরবাইক চালিয়ে পৌঁছে ছিলেন আন্দোলন স্থলে। তিনি বলেন, “আমরা বাংলা থেকে এসেছি শুনে, আন্দোলনকারীরা যেন বাড়তি শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। খুবই ভাল লাগছে, একটি ঐতিহাসিক আন্দোলনের সাক্ষী থাকতে পেরে।”
দিল্লির কৃষক আন্দোলনে দু’বার প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল সিটু অনুমোদিত হিন্দুস্থান স্টিল এমপ্লয়িজ় ইউনিয়ন। দু’বারই গিয়েছিলেন বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌরভ দত্ত এবং ললিত মিশ্র। প্রথম বার, ১৯ জানুয়ারি রাতে, উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ জেলার মোহনপুরের কাছে গাজিপুরে। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড প্রভৃতি জায়গার চাষিরা সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। সৌরভ বলেন, “কৃষক আন্দোলনের এমন ঐক্যবদ্ধ রূপ আগে কখনও দেখিনি। সবাই সবার পাশে। দিল্লির সাতটা সীমানাই তখন চাষিদের দখলে। আন্দোলন কী ভাবে করতে হয়, সে শিক্ষা নিয়ে ফিরেছিলাম।” ফের তাঁরা গিয়েছিলেন ২৬ ফেব্রুয়ারি। এ বার সিঙ্ঘু সীমানায়। কথা হয়েছিল, কৃষকসভার পঞ্জাব প্রদেশের সম্পাদক মেজর সিংহের সঙ্গে। দু’বারই সাংগঠনিক ভাবে সাধ্যমতো সাহায্যও তুলে দিয়েছিলেন বিশ্বরূপ, সৌরভরা। এ দিন, সংগঠনের ডিএসপি টাউনশিপের বি-জ়োনের বিদ্যাসাগর অ্যাভিনিউয়ের কার্যালয় থেকে মিছিল বার হয়। কৃষক আন্দোলন চলাকালীন মৃত কৃষকদের স্মরণ করা হয় এ দিন।
এ দিকে, কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে রানিগঞ্জে মিছিল করে কৃষকসভা। তিনটি জায়গায় পথসভাও আয়োজিত হয়। এ দিন বিকেলে
মিষ্টি বিতরণ করে পানাগড় বাজারে আনন্দে মাতেন ‘ভারতীয় কিসান একতা সংগঠন’। আন্দোলনকারী কৃষকদের অভিনন্দন জানান পানাগড়ের শিখ সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তাঁদের তরফে কুলদীপ সিংহ বলেন, “কৃষকদের জেদের কাছে শেষমেশ হার মানতে হল শাসককে।”