রাজু ঝা। ফাইল চিত্র।
বর্ধমানের কয়লা ব্যবসায়ী রাজু ঝা খুনের পর কেটে গিয়েছে ৬ দিন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অধরা আততায়ীরা। তদন্তে সেভাবে অগ্রগতি না হওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
গত শনিবার রাজু খুনের পর সোমবারই বর্ধমান জেলা পুলিশের একটি দল আততায়ীদের খোঁজে ঝাড়খণ্ডে গিয়েছে। যদিও তার পর নতুন আর কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। তবে পুলিশের বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির ডাক পাওয়ার পরেই রাজ্যের খনি অঞ্চলের ‘বেতাজ বাদশা’ কে খুন করা হয়েছে। তা ছাড়া এই খুনে ঝাড়খণ্ডের সুপারি কিলারদের যে সরাসরি যোগ রয়েছে, সেটিও ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ঠিক কী কারণে রাজুকে খুন করা হল? কেনই বা রাজু খুন হওয়ার পরে গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ ঘটনাস্থল থেকে গা ঢাকা দিলেন? তা নিয়ে বাড়ছে রহস্য। শুক্রবার পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে সিটের তদন্তকারী সদস্যের নিয়ে দিনভর একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, কয়লা পাচার মামলায় রাজুকে তলব করে ইডি। গত সোমবার তাঁর হাজিরা দেওযার কথা ছিল। কিন্তু তার ঠিক একদিন আগে অর্থাৎ শনিবার রাত ৮টা নাগাদ শক্তিগড়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে খুন হন রাজু। একটি সাদা ফরচুনা গাড়ির চালকের বাঁ পাশের আসনে বসে ছিলেন তিনি। এ ছাড়া গাড়িতে ছিলেন তাঁর সহযোগী ব্রতীন মুখোপাধ্যায় এবং সিবিআইয়ের তদন্তাধীন গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, সাদা ফরচুনা গাড়িটির ঠিক পিছনে নীল রঙের একটি চারচাকা গাড়ি এসে দাঁড়ায়। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা ওই গাড়িটি থেকে কয়েকজন নেমে এসে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা ফরচুনা গাড়িটি লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালান। ঘটনাস্থলেই ম়ৃত্যু হয় রাজুর। গুরুতর আহত অবস্থায় ব্রতীনকে উদ্ধার করে বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। যদিও গাড়ির চালক এবং লতিফের কোনও ক্ষতি হয়নি। কিন্তু তারপর থেকেই ফেরার আব্দুল লতিফ।
শুক্রবার বর্ধমানের কার্জনগেটের বিজেপি সভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই খুন নিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে একহাত নেন। তিনি বলেন, “জনবহুল এলাকার মধ্যে একজন খুন হয়ে গেল, অপরাধীরা গা ঢাকা দিল। অথচ পুলিশ তাদের ধরতে পারলো না।”
শনিবার ঘটনার আধ ঘন্টার মধ্যে যে দোকানের সামনে গুলি চলে সেই ল্যাংচার দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। তারপর কেন আবার আততায়ীদের স্কেচ আঁকানো হল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ল্যাংচা হাবের ব্যবসায়ীদের পুলিশের পক্ষ থেকে রীতিমতো হুশিয়ারি দেওয়া হয়, যাতে কোনও ভাবে গুলি চালানোর সিসিটিভি ফুটেজ বাইরে সরবরাহ না করা হয়।
জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “পুলিশ প্রশাসন যে দুর্বল, এটা তার প্রমাণ। ৬ দিন কেটে গেলেও অপরাধীরা অধরা। গরু পাচারকারী লতিফ পালিয়ে গেল তাই মনে হচ্ছে, ডাল মে কুচ কালা হ্যায়।”
তৃণমূল মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “বিজেপি কী বলল, তাতে কিছু যায় আসে না। প্রশাসন তদন্ত করছে। সুতরাং এটা নিয়ে আগ বাড়িয়ে এত কথার কী আছে।”
যদিও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ রায় রাজু খুনের তদন্ত নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। রাজু খুনের ঘটনায় শুক্রবার পর্যন্ত আদালতে পুলিশ সিজার লিস্ট জমা দিতে পারেনি। শনিবার দু’জন প্রত্যক্ষদর্শীকে সিটের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি তাঁদের বয়ানও রেকর্ড করেছেন বলে খবর। আপাতত তদন্ত কোন দিকে এগোয় সেটাই দেখার।