Raju Jha Murder Case

ব্যবসার সূত্রেই কি অবনতি রাজু ও নারায়ণের সম্পর্কে

বুধবারই অবশ্য নারায়ণ জানিয়েছিলেন, রাজু তাঁর বাল্যবন্ধু। তাঁদের ব্যবসাও আলাদা। ঘটনা হল, বিভিন্ন সূত্রের দাবি, এ কথা ঠিক যে, রাজু ও নারায়ণের সম্পর্ক বহু পুরনো।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:২৫
Share:

রাজু ঝা-কে খুনের ১৯ দিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পানাগড়ের বাসিন্দা (বাঁ দিকে) অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।

কয়লা কারবারে অভিযুক্ত রাজেশ ওরফে রাজু ঝা খুনে অভিজিৎ মণ্ডল নামে এক জন গ্রেফতার হয়েছেন। নানা সূত্রের দাবি, অভিজিৎ রানিগঞ্জের কয়লা কারবারি নারায়ণ খড়কার সংস্থায় কাজ করতেন। এই তথ্যটি সামনে আসার পরে এবং নারায়ণের সিটি সেন্টারের কার্যালয় সিট ‘সিল’ করে দেওয়ায় নিহত রাজু ও নারায়ণের সম্পর্ক নিয়ে নানা জল্পনা রয়েছে বিভিন্ন মহলে। বিশেষ সূত্রে দাবি, পরিবহণ, বালি ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের ‘অবনতি’ হয়েছিল।

Advertisement

বুধবারই অবশ্য নারায়ণ জানিয়েছিলেন, রাজু তাঁর বাল্যবন্ধু। তাঁদের ব্যবসাও আলাদা। ঘটনা হল, বিভিন্ন সূত্রের দাবি, এ কথা ঠিক যে, রাজু ও নারায়ণের সম্পর্ক বহু পুরনো। বিশেষ সূত্রের দাবি, বাম আমলে খনি অঞ্চলে কয়লার বেআইনি কারবারের নিয়ন্ত্রক ছিলেন রাজু। নারায়ণ ছিলেন রাজুর অন্যতম সহযোগী। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে রাজু অন্য নানা ব্যবসায় জোর দেন। এর অন্যতম ছিল পরিবহণ ব্যবসা। আসানসোল ও দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল থেকে কলকাতার ধর্মতলা এবং করুণাময়ী রুটে বিলাসবহুল বাস পরিষেবা চালু হয় তাঁর হাত ধরেই। শুধু এই রাজ্যের পরিবহণ সংস্থার হয়েই (ফ্রাঞ্চাইজি) নয়, রাজুর বাস চলত ঝাড়খণ্ডের সরকারি পরিবহণ সংস্থার হয়েও। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন মহলে কান পাতলে শোনা যায়, ওই পরিবহণ ব্যবসায় লগ্নি ছিল নারায়ণেরও। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। শুরু হয় দু’জনের মনোমালিন্য। কিছু বাস বিক্রি করে দেওয়া হয়। কিছু বাস পড়ে থেকে-থেকে নষ্ট হয়। বিপুল লোকসান হয়। দু’জনের মধ্যে সম্পর্কে অবনতি হয়ে থাকতে পারে তখনই, অনুমান ওয়াকিবহাল মহলের। পাশাপাশি, লকডাউনের সময় রাজু কয়লার মতো বালির কারবারেও ‘প্যাড’ চালু করতে উদ্যোগী হন বলে একটি সূত্রের দাবি। সূত্রের দাবি, নারায়ণ রাজুর সেই কারবারেও লগ্নি করেছিলেন। কিন্তু বালির ‘প্যাড প্রথা’ সে ভাবে চালু করা যায়নি। মাসখানেকের মধ্যে তাতে সমস্যা দেখা দেয়। একটি সূত্রের দাবি, নারায়ণ না কি লগ্নি করা টাকা ফেরত চান। রাজু ফেরত দিতে গড়িমসি করতে থাকেন। এ নিয়েও মনোমালিন্য ছিল কি না দু’জনের, তা নিয়েও চর্চা রয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রে খবর, গত সাত-আট মাস ধরে কয়লা কারবারে রাজুর একচেটিয়া আধিপত্য নারায়ণের মতো কারবারিদের কোণঠাসা করে দেয়।

পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য ফোন করা হলেও, নারায়ণের ফোন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধ দেখা গিয়েছে।

Advertisement

এ দিকে, নারায়ণের যে কার্যালয়টি সিট ‘সিল’ করে দিয়েছে, সেটির ক্যান্টিনে রান্নার কাজ করেন এক যুবক। তিনি জানান, বুধবার রাতে পুলিশ এসে তাঁদের কাছে জানতে চান ‘মালিক কোথায়’? তাঁরা জানাতে পারেননি। পুলিশ কার্যালয় ‘সিল’ করে দেওয়ায় তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। কাজ নেই আর। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই কার্যালয়ের কাছেই একটি সাদা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। সেটি কার, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে।

পাশাপাশি, রাজু খুনের বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক তরজাও দেখা দেয়। বিজেপি নেতা জিতেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সিট তদন্ত-তদন্ত খেলছে। রাজ্যের পুলিশ কখনই মাথাকে ধরতে পারবে না। ফলে, সিবিআই তদন্ত দরকার।” যদিও, তৃণমূল নেতা তথা দুর্গাপুরের পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর ভাইস চেয়ারম্যান অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সিবিআই তদন্ত হলে আসল লোক ধরা পড়বে না, তৃণমূলের কাউকে ধরবে। আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে রাজু অন্তত ছ’বার গ্রেফতার হয়েছে। অথচ বিজেপি সব রকম ভাবে রাজুকে ব্যবহার করেছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement