ভারী বৃষ্টি হলে ক্ষতি হতে পারে ধানেরও, মনে করছেন চাষিদের অনেকে। ছবি: জয়ন্ত বিশ্বাস
গত চার মাসে মাঝেমধ্যেই ভারী বৃষ্টির জেরে আনাজ উৎপাদন কমেছে। চাষিরা আশায় ছিলেন, পুজোর আগে রোদ ঝলমলে আবহাওয়া পেলেই মাঠ থেকে জলদি জাতের কিছু আনাজ তুলে আয় করা যাবে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ফের বৃষ্টি হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের।
পূর্ব বর্ধমানে ভাল আনাজ উৎপাদন হয় কালনা মহকুমায়। এই মহকুমার কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বুধ থেকে শুক্রবার, এই তিন দিনে কালনা ১ ব্লকে ৫০.৮ মিলিমিটার, পূর্বস্থলী ১ ব্লকে ৯২.৮ মিলিমিটার, পূর্বস্থলী ২ ব্লকে ৬.৪ মিলিমিটার এবং মন্তেশ্বরে ৫৭.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। শনিবারও দফায়-দফায় বৃষ্টি হয়। কালনার আনাজ চাষিরা জানান, ঘূর্ণিঝড় আমপানের সময় থেকে বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে বহু আনাজের জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে, পটল-সহ নানা আনাজের সরবরাহ কমেছে। প্রতিবার দুর্গাপুজোর আগে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বিন, বিট, গাজর-সহ কিছু জলদি জাতের আনাজ ফলানো হয়। উৎসবের মরসুমে ভাল দাম মেলে সেই আনাজের। এ বারও সেই চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু লাগাতার বৃষ্টি সমস্ত পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিচ্ছে, দাবি তাঁদের।
পূর্বস্থলীর ফুলকপি চাষি গোবিন্দ ঘোষের কথায়, ‘‘সবে জমিতে জলদি জাতের ফুলকপি ধরেছে। তবে যে ভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, গাছ পচে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’’ চাষিদের দাবি, জলদি জাতের আনাজ চাষে খরচও বেশি। কিন্তু ভাল দর মেলায় তা পুষিয়ে যায়। কিন্তু বৃষ্টি বাড়লে তাঁদের ক্ষতির বহর বাড়বে। কালনা ২ ব্লকের চাষি আতাউর শেখ জানান, ‘‘বারবার বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে আনাজের জমি। আশা করেছিলাম, পুজোর আগে অন্তত রোদ ঝলমলে আবহাওয়া থাকবে। কিন্তু আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ায় জলদি চাষও মার খেতে বসেছে!’’ তাঁর দাবি, শুধু আনাজ নয়, বৃষ্টির জেরে জলদি ধানও ক্ষতির মুখে পড়বে। আনাজের আড়তদারেরাও জানান, একে আনাজের জোগান দীর্ঘদিন কম। এর পরে জলদি চাষ মার খেলে উৎপাদন আরও কমবে। সেক্ষেত্রে খোলা বাজারে আনাজের দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, দাবি তাঁদের।
মহকুমা কৃষি দফতরের অন্যতম সহ-কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষ জানান, জলদি আনাজ চাষের জন্য দরকার হয় মেঘমুক্ত আকাশ। বারবার বৃষ্টির জেরে বহু জমিতেই জল জমে যাচ্ছে। তাতে ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাছ। তিনি বলেন, ‘‘টানা বৃষ্টি চললে জলদি আনাজ চাষে ক্ষতি বাড়বে। চাষিদের উচিত, জমিতে জমা জল দ্রুত বার করে দেওয়া। সেই সঙ্গে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।’’