সম্প্রতি ফাঁড়িতে বিক্ষোভ দেখায় জনতা।—নিজস্ব চিত্র।
পনেরো দিনের মধ্যে ছিনতাই, ডাকাতি ও ধর্ষণের মতো ঘটনা। এলাকায় একের পর এক এমন দুষ্কর্মে আতঙ্কে কুলটির নিয়ামতপুরের বাসিন্দারা। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্যই এলাকায় এই ধরনের ঘটনা বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের অনেকেরই। পুলিশের যদিও দাবি, অপরাধে জড়িতদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে, শীঘ্রই ধরে ফেলা হবে।
সোমবার রাতে এক আদিবাসী মহিলাকে গণধর্ষণের অভিযোগ সামনে আসার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন নিয়ামতপুরের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, এই এলাকার এর আগে কখনও এই ধরনের অপরাধ ঘটেনি। ওই রাতে যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ, সেখানে আগে পুলিশের টহল ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে তা দেখা যাচ্ছে না। পুলিশের টহলদার গাড়ির আনাগোনা থাকলে এই ঘটনা না-ও ঘটতে পারত বলে এলাকাবাসীর দাবি। টহল থাকলে দুষ্কৃতীদের দ্রুত ধরে ফেলাও সম্ভব হয় বলে মনে করেন তাঁরা। বাসিন্দাদের মতে, তা না থাকায় সহজেই অপকর্ম করে গা ঢাকা দিতে পারছে দুষ্কৃতীরা।
গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা গেলেও দিন দশেক আগে এক চাল ব্যবসায়ীকে মারধর করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় এখনও অন্ধকারে পুলিশ। নিয়ামতপুর ফাঁড়ির সামান্য দূরে প্রকাশ্যে ওই ছিনতাই হয়। রিভলবারের বাঁট দিয়ে মেরে বর্ধমানের ওই ব্যবসায়ীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, কারা এই দুষ্কর্ম করল, তা এখনও জানতে পারেনি পুলিশ। কমিশনারেটের এসিপি (পশ্চিম) অভিষেক রায় যদিও জানান, অপরাধীদের বিষয়ে খোঁজখবর মিলেছে। শীঘ্রই তাদের ধরা হবে। পুলিশের দাবি, ছিনতাইয়ে জড়িতেরা বহিরাগত।
কিন্তু ছিনতাইয়ের ঘটনার পরে যে পুলিশের টনক নড়েনি, তা কিন্তু দিন দশেকের মধ্যে ফাঁড়ির অদূরে বিষ্ণুবিহার কলোনিতে পরপর দু’টি বাড়িতে লুঠপাটের ঘটনায় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তালাবন্ধ দু’টি বাড়িতে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুষ্কৃতীরা ঢুকে জিনিসপত্র নিয়ে পালায়।
পরপর অপরাধের ঘটনা কেন ঘটছে? এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত কয়েক মাসে নিয়ামতপুরের নানা অঞ্চলে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অবৈধ মদ ও জুয়ার ঠেক। এই সব ঠেকে শুধু এলাকার লোক নয়, ভিড় জমাচ্ছে বহিরাগতরাও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ ফাঁড়ির অদূরেই নানা হোটেলে মদ বিক্রি হচ্ছে। নিয়ামতপুর বাজার, চবকা, লছিপুর, স্টেশন রোড, চিত্তরঞ্জন রোড, ইস্কো বাইপাস ও সীতারামপুর স্টেশন লাগোয়া এলাকায় বেশ কিছু মদ ও জুয়ার ঠেক গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ।
এমন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নানা রাজনৈতিক দলও। কুলিটি পুরসভার প্রাক্তন উপপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা বাচ্চু রায় বলেন, ‘‘ইদানীং বেশ কয়েকটি অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে। মানুষজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে।’’ সিপিএমের কুলটি জোনাল সম্পাদক সাগর মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘পুলিশ সক্রিয় থাকলে আদিবাসী মহিলার উপরে নির্যাতন হত না।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, এলাকার মদ-জুয়ার ঠেকগুলি পুলিশ দেখেও দেখছে না। কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক চণ্ডী চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘নিয়ামতপুরে পরের পর ঘটনাই প্রমাণ করছে পুলিশ এলাকায় কতটা নিষ্ক্রিয়।’’ বিজেপির কুলটি মণ্ডলের সহ-সভাপতি সুনীল সরকারেরও অভিযোগ, ‘‘পুলিশের গা-ছাড়া মনোভাবে দুষ্কৃতীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে।’’
কমিশনারেটের এসিপি (পশ্চিম) অভিষেক রায়ের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে পুরো বিষয়টি দেখছি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’’