আসানসোলের রাস্তায় গবাদি পশু। ছবি: পাপন চৌধুরী।
শহরের ভিতরের রাস্তায় তো বটেই, জিটি রোড এবং জাতীয় সড়কেও অবাধে চরছে গরু-মোষ। এর ফলে নিত্য সমস্যায় পড়তে হচ্ছে গাড়ি চালকদের। ঘটছে দুর্ঘটনাও। বুধবার দুর্গাপুরে আচমকা সামনে মোষ চলে আসায় দুর্ঘটনায় পড়ে একটি পুলকার। জখম হয় তিন ছাত্রী। এই ঘটনার পরে বড় রাস্তা গরু-মোষ চরে বেড়ানো বন্ধের দাবিতে সরব হয়েছেন বাসিন্দারা। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রের দাবি, জেলার দুই মহকুমাতেই খোঁয়াড় তৈরির উদ্যোগ হচ্ছে। চলতি বছরেই তা উদ্যোগ কার্যকর হবে।
স্কুল থেকে ফেরার পথে পড়ুয়া বোঝাই একটি পুলকার বুধবার দুর্গাপুরের বিধাননগরের কাছে দুর্ঘটনায় পড়ে। চালকের দাবি, রাস্তার মাঝে হঠাৎ একটি মোষ চলে আসায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটিকে ধাক্কা মেরে গাড়ি রাস্তার পাশে নেমে যায়। সে দিন বড় বিপদ এড়ানো গেলেও, যে কোনও দিন তেমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর। পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (ট্র্যাফিক) জি ভি সতীশ বলেন, ‘‘ব্যস্ত রাস্তায় গবাদি পশুর চলাফেরা বন্ধ করতে পুলিশের তরফে কঠোর পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাস্তায় কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকেও নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
দুর্গাপুর শহরে কয়েক দশক ধরে খাটাল চলছে। জাতীয় সড়কের ধারে নানা জায়গা জবরদখল করা জায়গায় খাটাল চলার অভিযোগ রয়েছে। দ্রুত গতির যানবাহনের সামনে আচমকা গবাদি পশু চলে আসায় দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরে গড়ে ৪-৫টি দুর্ঘটনা ঘটে। জখম হন গড়ে ৮ জন। বাম আমলে এক বার পুরবোর্ড খাটালগুলি সরিয়ে শহরের বাইরে খাটাল কলোনি গড়ার পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু খাটাল মালিকেরা বেঁকে বসেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে খাটাল মালিকদের বৈঠকে ডাকে পুলিশ। রাস্তায় পশু দেখলে বাজেয়াপ্ত করা ও খাটাল মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়। যদিও খাটাল মালিকেরা দাবি করেন, গবাদি পশুকে সব সময় গোয়ালে বেঁধে রাখলে তাদের সমস্যা হয়। তাই গবাদি পশু যাতে রাস্তায় না ওঠে সে দিকে নজর রাখা হবে। তার পর থেকে ট্র্যাফিক বিভাগের কর্মীরা মাসে গড়ে দু’বার করে খাটালে গিয়ে সচেতন করতেন। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। নানা সময়ে অভিযান, সচেতনতা প্রচার করেও খুব লাভ হয়নি বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।
কুলটির রানিতলা, বরাকরের স্টেশন রোড, আসানসোলের গোপালপুর, ধেমোমেন, সাতাশা, জাতীয় সড়কের ধারে ধাদকা, সিদলা, বার্নপুরের নিউটাউনে রাস্তায় গরু-মোষ চরতে দেখা যায়। আসানসোলের সাতাশার বাসিন্দা পুলক গুপ্তের কথায়, ‘‘মাইন্স রেসকিউ স্টেশনের কাছে প্রতিদিনই এক দল গরু-মোষ জিটি রোড জুড়ে বসে-দাঁড়িয়ে থাকে। মোষের ধাক্কায় দুর্ঘটনায় পড়ে গুরুতর জখম হয়েছি।’’ খাটাল মালিকদের একাংশের যদিও দাবি, খাটালের গরু-মোষ ছেড়ে রাখা হয় না। পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের ছেড়ে রাখা গবাদি পশু রাস্তায় চরে বেড়ায়।
ডিসি (ট্র্যাফিক) জানান, বিষয়টি পুলিশের নজরে রয়েছে। খাটাল মালিকদের সঙ্গে ফের কথা বলে নিয়ম মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হবে। তিনি জানান, সাধারণত রাস্তায় মালিকানাহীন ভাবে ঘোরাফেরা করা গবাদি পশুগুলিকে পাকড়াও করে খোঁয়াড়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। পরে আদালতের নির্দেশনামা নিয়ে এসে মালিকদের সেখান থেকে পশুগুলি নিয়ে যাওয়াই নিয়ম। কিন্তু জেলায় তেমন খোঁয়াড় নেই যেখানে পশুগুলিকে রাখা যায়। তিনি বলেন, ‘‘জেলার দুই মহকুমায় পশু খোঁয়াড় তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসন ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় জায়গা দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। জায়গা মিললেই পদক্ষেপ করা হবে।’’