জেলার গ্রামীণ এলাকার ১১টি জায়গাকে ‘অতি দুর্ঘটনা প্রবণ’ (পুলিশের ভাষায়, ‘ব্ল্যাক স্পট’) এলাকা বলে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তার মধ্যে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর রয়েছে পাঁচটি জায়গা, আর বাকি ৬টি জায়গা রয়েছে রাজ্য সড়কের উপর। সম্প্রতি জায়গাগুলি দেখে গিয়েছেন রাজ্য ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা। জেলা পুলিশেরও দাবি, জাতীয় ও রাজ্য সড়কে যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনার জন্য কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছেন তাঁরা।
মাস দু’য়েক আগে সিঙ্গুরে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি। তারপরেই জাতীয় ও রাজ্য সড়কে ট্র্যাফিক ব্যবস্থার বদল আনতে নড়েচড়ে বসেন কর্তারা। জেলায় জেলায় বৈঠকও হয়। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা কোথায় ঘটেছে তার বিস্তারিত তালিকা রাজ্য ট্র্যাফিক পুলিশের কাছে পাঠান বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল। সেই তালিকা ধরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর গলসির পারাজ মোড়, গলসি মোড় ও গলিগ্রাম মোড়কে ‘অতি দুর্ঘটনা প্রবণে’র ‘ক্যাটাগরি ‘এ’ তালিকায় রাখা হয়েছে। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, এক বছরের মধ্যেই ওই তিন জায়গাতে ৯টি, ৮টি ও সাতটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটিতেই প্রাণহানি হয়েছে। এ ছাড়াও নজরে রাখা হচ্ছে বর্ধমান থানার উল্লাস মোড়, নবাবহাট-ফাগুপুর মোড় ও মেমারির পালশিট এলাকাকে। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্ধমান গ্রামীণ এলাকায় জাতীয় সড়কের উপর গত ৬ মাসে ৯৭টি দুর্ঘটনায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর সঙ্গেই রাজ্য সড়কের উপর কাঁকসার এগারো মাইল, বসুধা, ভাতারের পোষলা, মঙ্গলকোটের কৈচর বাসস্টপ, কাটোয়ার রামদাসপুর ও রায়নার মোগলমারিকেও অতি দুর্ঘটনা প্রবণ হিসেবে ঘোষণা করেছে পুলিশ। ওখানে বছরে অন্তত দু’তিনটে দুর্ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘প্রথম পর্যায়ের জিপিএস সুবিধাযুক্ত দু’টি হাইওয়ে পেট্রল গাড়ি জাতীয় সড়কে টহল দেবে। আরও দু’টি গাড়ি চাওয়া হয়েছে। সেগুলি রাজ্য সড়কে টহল দেবে।’’ ওই গাড়িতে পুলিশকর্মীর সঙ্গে প্যারামেডিক্যাল কর্মীও থাকবেন। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় সড়কের উপর পাঁচটি জায়গায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। এতে সহজেই দোষীকে চেনা যাবে। পরে রাজ্য সড়কেও ওই ক্যামেরা লাগানো হবে। এ ছাড়াও রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের বাঁকে বড় হোর্ডিং সরানোর প্রস্তাব, জাতীয় সড়কের পাশে পুলিশ ফাঁড়ি তৈরি করারও প্রস্তাব দেবে জেলা পুলিশ।
তবে ভুক্তভোগীদের দাবি, জাতীয় হোক রাজ্য সড়ক, রাস্তার দু’ধারে বেআইনি পার্কিংয়ের জন্য বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। তা করতে না পারলে দুর্ঘটনার হার কমানো যাবে না। জেলা পুলিশের যদিও দাবি, লাগাতার টহলদারির জন্য বেআইনি পার্কিং অনেকটাই কমেছে।