অনিয়ম: এই ধরনের দোকানগুলি নিয়েই বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।
কোথাও পলিথিনের ছাউনির তলায় চলছে দোকান। কোথাও বা মাথা তুলেছে ইটের দেওয়াল, পাকা ছাদ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ ভাবেই দুর্গাপুর শহরে নানা জায়গায় সরকারি জায়গা দখল করে চলছে ব্যবসা। অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই জবরদখলে মদত রয়েছে শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের। আর তাই, মাঝেসাঝে প্রশাসন পদক্ষেপ করলেও এই সমস্যার স্থায়ী কোনও সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ।
দুর্গাপুরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সিটি সেন্টার, বিধাননগর, বেনাচিতি, দুর্গাপুর স্টেশন-সহ প্রায় সর্বত্র রাস্তার ধারে সরকারি জমি দখল করে রমরমিয়ে চলছে ব্যবসা। এ ভাবে জাঁকিয়ে বসার বেশ কিছু ধাপ রয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। তাঁরা জানান, সাধারণত দেখা যায়, প্রথমে রাস্তার ধারের জায়গা দখল করে পলিথিন টাঙিয়ে কিছুটা জায়গা ঘিরে ফেলা হল। তার পরে ধীরে ধীরে শুরু পাকাপাকি জবরদখলের বন্দোবস্ত। ঝকঝকে, পাকা ঘরে দিন কয়েক বাদেই চালু হয়ে যায় দোকান। শুধু তাই নয়, দোকান লাগোয়া এলাকাও কিছু দিনের মধ্যে জবরদখল হয়ে যায় বলে অভিযোগ। গজিয়ে ওঠে আরও নতুন দোকান।
এমন পরিস্থিতিতে রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি শহরের সৌন্দর্যায়নেরও দফারফা হচ্ছে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা। দুর্গাপুর পুরসভা প্রায় ছ’বছর ধরে তৃণমূলের দখলে। শহরবাসীর একাংশের দাবি, তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের মদতেই বেআইনি ভাবে সরকারি জমি দখল করে দোকানপাট গজিয়ে উঠেছে। কেউ অর্থের বিনিময়ে, কেউ বা মানবিক কারণে জবরদখলকারীদের সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ তাঁদের।
যদিও টাকা বিনিময়ের অভিযোগের কথা মানতে চাননি নানা এলাকার তৃণমূল নেতারা। তবে তাঁদের দাবি, ব্যবসা করার জায়গা জোগাড় করতে না পেরে অনেকেই পেটের টানে ফাঁকা জায়গা অস্থায়ী ভাবে ব্যবহার করেন। তাই মানবিক কারণেই আপত্তি জানানো হয় না। তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গরীব মানুষ অনেক সময়েই জনবহুল রাস্তার ধারে কিছুটা জায়গায় ছোট দোকান খুলে বসেন। সরকারের জমি প্রয়োজন হলে তাঁদের উঠে যেতে হয়।’’
দুর্গাপুরের অধিকাংশ ফাঁকা জমি রয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) অধীনে। বছর চারেক আগে এডিডিএ শহর জুড়ে বেআইনি দখলদার উচ্ছেদ শুরু করে। সেই দখলদার অভিযান থেকে রেহাই পায়নি তৃণমূলের ঝকঝকে একাধিক পার্টি অফিসও। কিন্তু মাঝপথে কোনও কারণে তা থমকে যায়। তারপরে থেকে দু’একবার ছোটখাটো উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে এডিডিএ। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য বলে অভিযোগ।
তবে এডিডিএ-র এক কর্তার দাবি, দ্রুত শহর জুড়ে টানা অভিযান চলবে। ওই কর্তার দাবি, ‘‘শহরের সৌন্দর্যায়নের জন্য উচ্ছেদ অভিযান জরুরি হয়ে পড়েছে।’’