অভিযুক্ত তৃণমূলের সঙ্গে চা, পুলিশকে বাধা গ্রামে

বিকেলে সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে পোস্টার সাঁটাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন দলের কর্মীরা। স্থানীয় তৃণমূল নেতা-সহ আট জনের নামে অভিযোগও দায়ের হয়। পরে সকালে পুলিশ গ্রামে ঢুকতে গেলে অভিযুক্তদের সঙ্গে চা খাওয়ার অভিযোগ তুলে পুলিশ কর্মীদের গাড়ি আটকে দেন খণ্ডঘোষের লোধনা গ্রামের বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৩০
Share:

লাঠি, ঝাঁটা নিয়ে বিক্ষোভ খণ্ডঘোষে গ্রামবাসীদের। নিজস্ব চিত্র।

বিকেলে সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে পোস্টার সাঁটাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন দলের কর্মীরা। স্থানীয় তৃণমূল নেতা-সহ আট জনের নামে অভিযোগও দায়ের হয়। পরে সকালে পুলিশ গ্রামে ঢুকতে গেলে অভিযুক্তদের সঙ্গে চা খাওয়ার অভিযোগ তুলে পুলিশ কর্মীদের গাড়ি আটকে দেন খণ্ডঘোষের লোধনা গ্রামের বাসিন্দারা।

Advertisement

বুধবার লাঠি, বঁটি হাতে নিয়ে গ্রামের মেয়ে-বউরা এগিয়ে এসে রাস্তা আটকান। তাঁদের অভিযোগ, উত্তিজিত বাসিন্দাদের শান্ত করার বদলে খণ্ডঘোষের ওসি বখতিয়ার হোসেন তাঁদের বলেন, ‘বেশ তো অন্য দলের সঙ্গে ঘুরছিলেন। আবার সিপিএমের সঙ্গে বের হওয়ার দরকার কী! যান ঘরে ঢুকে পড়ুন।’ যদিও ওসি অভিযোগ মানতে চাননি। ওসির সঙ্গে থাকা এসডিপিও (বর্ধমান) সৌমিক সেনগুপ্তও বলেন, ‘‘আমরা গ্রামে ঢুকে ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার কথা বলেছি। কোথাও অসুবিধে হয়নি।’’

এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ পুলিশের গাড়ি মেটে পাড়ায় ঢোকার মুখে লাঠি, ঝাঁটা নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। খণ্ডঘোষের ওসি, বর্ধমানের এসডিপিও-র সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরাও ছিলেন। গ্রামের পুরুষ-মহিলারা এককাট্টা হয়ে তাঁদের ঢুকতে বাধা দেন। তাঁরা অভিযোগ করতে থাকেন, “আমাদের উপর গত কয়েকদিন ধরে বারেবারে হামলা চালানো হচ্ছে। পুলিশ আর তৃণমূল যাতে এক সঙ্গে আমাদের উপর হামলা চালাতে না পারে সে জন্য আমরা রাতভর পাহারাও দিয়েছি।” গ্রামের বাসন্তী মাঝি, বিমলা হেমব্রম, উত্তম সাঁতরা, হারু পণ্ডিতদের অভিযোগ, “তৃণমূল গত কয়েকদিন ধরে আমাদের কাজে যেতে বাধা দিয়েছে। মালিকদের বলে দিয়েছে, চাষের কাজে আমাদের যাতে না নেয়। এমনকী, আমাদের বাড়ির ছেলেদের দোকানও বন্ধ করে দিয়েছে।’’ এ নিয়ে বারেবারে থানায় অভিযোগ জানানোর পরেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে তাঁদের দাবি।

Advertisement

এর মধ্যেই মঙ্গলবার বিকেলে মেটে পাড়া থেকে কিছুটা দূরে শিবতলায় সিপিএম প্রার্থী অসীমা রায়ের সমর্থনে পোস্টার সাঁটাচ্ছিলেন বেশ কিছু দলীয় কর্মী-সমর্থক। অভিযোগ, আচমকা জনা কুড়ি তৃণমূলের লোকজন মোটরবাইকে এসে তাদের উপর হামলা চালায়। লাঠি, টাঙি দিয়ে মারধর করে আহতদের রাস্তায় ফেলে রেখে পালায় তারা। পরে স্থানীয় বাসিন্দরা এসে জখমদের হাসপাতালে ভর্তি করান। রাতে মমতা ঢাল নামে গ্রামেরই এক মহিলা তৃণমূলের ৮ জনের নামে থানায় অভিযোগ করেন। বুধবার পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতারও করে। স্থানীয় বাসিন্দা ভাগ্য ঢাল, অঞ্জলি সাঁতরাদের দাবি, ‘‘এরপরেও গ্রামে যে তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, পুলিশ তাঁর সঙ্গেই চা খাচ্ছে দেখে আমরা পাড়ায় পুলিশকে আটকে দিয়েছিলাম।” তখনই খণ্ডঘোষের ওসি তাঁদের ওই কথা বলেন বলেও গ্রামবাসীদের দাবি।

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগেই ওই ওসির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছিলেন জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক। তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের সঙ্গে প্রকাশ্যে ওসিকে ঘুরতে দেখা গিয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ ছিল। এ দিন স্থানীয় বাসিন্দারাও পোস্টার লিখে ওসির শাস্তির দাবি করেন। সিপিএম নেতাদের দাবি, গত বিধানসভা ভোটের পরে এই এলাকায় মিটিং-মিছিল তো দূরের কথা লাল পতাকাও ওড়েনি। সেখানে গত সপ্তাহে গ্রামে মিছিল হয়। মিছিলের স্বতস্ফূর্ততা দেখেই তৃণমূল তাঁদের কর্মীদের রাস্তায় ধরে মারধর করছে বলেও নেতাদের দাবি। স্থানীয় সিপিএম নেতা বিনোদ ঘোষের দাবি, “গ্রামে ঢোকা ও বের হওয়ার একটাই রাস্তা। সেই রাস্তা ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তৃণমূল। তাতে মদত দিচ্ছে পুলিশ।”

দলের খণ্ডঘোষ জোনাল কমিটির সদস্য আসগর মণ্ডলের দাবি, ‘‘পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত তখন খণ্ডঘোষের ওসি আমাকে ফোন করে বলেন, ‘আপনাদের লোকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের আটকে দিয়েছে। বিষয়টি দেখুন। তা না হলে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মতো বাহিনী নিয়ে টহল দেওয়া যাবে না।’ এই শুনে আমি ও জোনাল কমিটির আরেক সদস্য মুন্সি ফরিয়াদ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করি। তারপর পুলিশ ও বাহিনী টহল দেয়।”

পরে দুপুরে অবশ্য ওসি বখতিয়ার হোসেন বলেন, “এখানে বড় কোনও ঘটনা নেই। সব পক্ষ শান্তিতে কাজ করছেন। তারপরেও আমার নামে কেন অভিযোগ করা হচ্ছে বুঝতে পারছি না।” বিরোধীদের অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়ে রায়না-খণ্ডঘোষের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা উত্তম সেনগুপ্তও বলেন, “সিপিএম ফের শান্ত খণ্ডঘোষকে অশান্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে ফাঁদ তৈরি করছে। আর পুলিশকে তৃণমূল নয়, সিপিএমই ভোটের কাজে ব্যবহার করত— এই সত্যিটা একজন শিশুও জানে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement