‘প্রয়াসে’র উদ্যোগে খুদেদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে নতুন পোশাক। নিজস্ব চিত্র।
প্রতি বছর মহালয়ার ভোরটা এলেই মুখ ভার হয়ে যেত ওদের। পুজো এসে গেল আবার! মণ্ডপে-মণ্ডপে ঘোরা, আনন্দ— কিছুই হবে না যে। কারণ, গায়ে দেওয়ার নতুন পোশাক কেনা হয় না যে। এ বার আর তেমনটা হবে না। কারণ শুক্রবার এলাকারই কয়েক জন, পড়ুয়া ‘দাদা’ কুলটির ওই ৫০ জন খুদের হাতে তুলে দিলেন নতুন পোশাক।
‘দাদা’দের এমন উদ্যোগে খুশির হাওয়া কুলটির নিয়ামতপুরের একটি সান্ধ্য স্কুলের শিক্ষিকাদের মুখেও। কারণ ওই ৫০ জন খুদে যে এই স্কুলেরই পড়ুয়া। স্কুলের শিক্ষিকা হৈমন্তী সেনগুপ্ত তো বলেই ফেলেন, ‘‘বেশির ভাগ ছাত্রই হতদরিদ্র পরিবার থেকে আসা। ওঁরা যখন ওই প্রস্তাবটা দিলেন, আমরাও ছাত্রদের গায়ের মাপজোক করে দ্রুত ওঁদের কাছে পাঠিয়ে দিই।’’ ছেলে-মেয়েদের পোশাক কটা করে লাগবে, তাও জানিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান শিল্পী চৌধুরী নামে এক জন।
ওই ‘দাদা’দের দলে রয়েছেন ২৩ জন। ওঁদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের, কেউ আবার ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র। তবে সকলেরই স্কুল জীবন কেটেছে রামকৃষ্ণ মিশনে। ‘কিছু করা’র তাগিদ থেকে বছর দুয়েক আগে সৌরভ লায়েক, দেবদীপ মুখোপাধ্যায়, সৌম্য সেনগুপ্তদের মতো কয়েক জন মিলে তৈরি করেন ‘প্রয়াস’ নামে একটি সংগঠন।
তা হঠাৎ এমন খুদেদের নতুন কাপড় দেওয়ার পরিকল্পনাটা কী ভাবে হল? সৌরভ জানান, প্রতি বার পুজোতেই নতুন জামা-কাপড় গায়ে দিলেই ওদের মুখগুলো বড় মনে পড়ে। খানিক দূরে দাঁড়িয়ে থাকা দেবদীপ, সৌম্য সেনগুপ্তরাও প্রায় একই ভাবে বলেন, ‘‘পুজোতে আমাদের থেকে ছোটদের ‘নতুন’ কিছুই জোটে না। বাচ্চাগুলোর মুখগুলো দেখলেই মনখারাপ করে।’’ জামা-কাপড়ের টাকা জোগাড় হয়েছে হাতখরচ বাঁচিয়ে।
শুক্রবার নিয়ামতপুরের ওই স্কুলে একটি অনুষ্ঠানে খুদেদের হাতে পোশাক তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন পুরুলিয়ার পুনুড়া রামকৃষ্ণ সাধনা আশ্রমের স্বামী ভাস্করানন্দ। তাঁর আশীর্বাদ, ‘‘ওঁরা আরও বড় কাজ করুন।’’
খুশির হাওয়া খুদেদের মুখেও। মহালয়াতে আর মন খারাপ হবে না, এটা ভেবেই আনন্দ হচ্ছে বলে জানায় খুদেরা। সন্ধ্যা বাউড়ি নামে তেমনই এক জন বলে ফেলে, ‘‘খুব ভাল লাগছে। পুজোয় নতুন জামা পেলাম। এ বার, প্রচুর ঠাকুর দেখব।’’— শুনতে শুনতে ‘দাদা’দের চোখগুলোও যেন আনন্দে ছলছল করে উঠল।