প্রতীকী ছবি।
জেলায় প্রতি বছর যত লোক মারা যান, রেশন কার্ড তার থেকে কম বাতিল হয় বলে অভিযোগ ছিল। খাদ্য দফতরের কর্তারা খোঁজ নিয়ে দেখেন, ‘ভুয়ো’ রেশন কার্ড দিয়ে প্রতি সপ্তাহে ‘খাদ্যসাথী’ প্রকল্পে কেজি-কেজি চাল-আটা তুলে নেওয়া হচ্ছিল। তাঁদের দাবি, ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পে ‘বায়োমেট্রিক’ পদ্ধতি ও আধার-রেশন কার্ড বাধ্যতামূলক হতেই ‘ভুয়ো’ রেশন কার্ড ধরা পড়তে শুরু করেছে। জেলায় মাসে সওয়া কোটি টাকার খাদ্য সামগ্রীর খরচ বেঁচে গিয়েছে।
পূর্ব বর্ধমান জেলায় রেশনের উপভোক্তা রয়েছেন ৫৫ লক্ষ ৩১ হাজার। দু’দফায় প্রায় এক লক্ষ ৬২ হাজার রেশন কার্ড ‘ভুয়ো’ বলে বাতিল করা হয়েছে। জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এক লক্ষ ৩৫ হাজার রেশন কার্ড বাতিলের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। প্রথম দফায় ৮৭ হাজার ও দ্বিতীয় দফায় ৭৫ হাজার ৫৩৭টি রেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। জেলার খাদ্য নিয়ামক আবির বালির দাবি, “গ্রাহক তালিকা থেকে মৃতদের নাম বাদ দেওয়া ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আমরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২২ শতাংশ বেশি রেশন কার্ড বাতিল করেছি। সে প্রক্রিয়া এখনও চালু রয়েছে।’’
দফতর সূত্রে জানা যায়, প্রথমেই সব ব্লক প্রশাসন, পুরসভাকে চিঠি পাঠিয়ে ‘ডেথ রেজিস্টার’ দেখে রেশন কার্ড গ্রাহকদের মধ্যে যাঁরা মৃত, তাঁদের নাম বাদ দিতে বলা হয়। এখন অনেক পঞ্চায়েত বা পুরসভা রেশন কার্ড বাতিলের শংসাপত্র ছাড়া, ‘মৃত্যু-শংসাপত্র’ দিতে নিমরাজি হচ্ছে।
প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, রেশন কার্ডের তালিকা থেকে মৃতদের নাম বাদ পড়ার সংখ্যা স্বাভাবিক হারের থেকে অনেক কম হচ্ছিল। জেলায় মাসে প্রতি হাজারে মৃত্যুর হার ছ’জন। কিন্তু সেখানে রেশন কার্ড বাতিল হচ্ছিল দু’জনের। তাই রাজ্য থেকে রেশন কার্ডের নাম বাদ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। দফতরের কর্তাদের একাংশের অনুমান, ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পে খোলাবাজার থেকে অনেক বেশি দামে চাল ও গম কিনে তা গ্রাহকদের দেওয়া হয়। সে জন্য প্রচুর টাকা খরচ হচ্ছে। সে খরচ কমাতেই নজর পড়েছে ‘ভুয়ো’ কার্ডের দিকে।
খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, ‘ডেথ রেজিস্টার’ পরীক্ষা করার পরেও ‘ভুয়ো’ কার্ড ছিল। রেশনের সঙ্গে আধার সংযোগ শুরু হতেই আরও ‘ভুয়ো’ গ্রাহক ধরা পড়ছে। ‘বায়োমেট্রিক’ পদ্ধতিতে রেশন নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে ‘ভুয়ো’ গ্রাহকদের খাদ্যসামগ্রী নিতে দেখা যাচ্ছে না। তাঁদের কার্ডও বাতিল হচ্ছে। খাদ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “জেলায় এখনও ৩০ শতাংশের মতো রেশন-আধার কার্ড সংযোগ হয়নি। তার মধ্যেও একটা অংশ ভুয়ো গ্রাহক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ ‘ওয়েস্টবেঙ্গল এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর জেলা সম্পাদক পরেশনাথ হাজরা বলেন, “এর ফলে প্রকৃত গ্রাহকেরা খাদ্যসামগ্রী পাচ্ছেন। আমরা খুবই সন্তুষ্ট। পরিবারের কেউ মারা গেলে কী ভাবে রেশন কার্ড কোথায় জমা দিতে হবে, আমরা তার পরামর্শ দিয়ে থাকি।’’