—প্রতীকী চিত্র।
ইসিএলের শোনপুর বাজারি প্রকল্পের পুনর্বাসন প্রকল্পের সুযোগ পাইয়ে দিতে, প্রশাসনের একাংশকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল ভোটার তালিকায় কিছু বহিরাগতের নাম নথিভুক্ত করিয়েছে।— এমন অভিযোগ করেছেন বিরোধী নেতৃত্ব। পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের নবগ্রাম পঞ্চায়েতের মধুডাঙা ও হরিপুর পঞ্চায়েতের ভাটমোড়া গ্রামে এই অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ। তৃণমূল অভিযোগে আমল দেয়নি। তবে জেলা প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে।
সম্প্রতি সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য বংশগোপাল চৌধুরী সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, শোনপুর বাজারি প্রকল্পের সম্প্রসারণের জন্য ১২টি গ্রামকে অধিগ্রহণ করে পুনর্বাসন দেওয়ার পরিকল্পনা নেয় ইসিএল। ইতিমধ্যে আটটি গ্রামের বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দেওয়াও হয়েছে। বর্তমানে মধুডাঙা ও ভাটমোড়া গ্রামে সেই প্রক্রিয়া চলছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যে কোনও গ্রাম অধিগ্রহণ করে পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য
পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত প্রধান, স্থানীয় বিধায়ক ও
ইসিএলের এক জন প্রতিনিধিকে নিয়ে গ্রাম কমিটি তৈরি হয়। এই কমিটি পুনর্বাসনযোগ্য বাসিন্দাদের নামের তালিকা জমা দেয় ইসিএলের কাছে। বংশগোপালের অভিযোগ, “এক বছর আগে এই দু’টি গ্রামের ভোটার তালিকায় শাসক দল প্রশাসনের একাংশকে কাজে লাগিয়ে অন্তত ৫০ জন বহিরাগতের নাম নথিভুক্ত করিয়েছে। তাঁদের অবৈধ ভাবে পুনর্বাসনের সুযোগ পাইয়ে দিতেই এই অনিয়ম করা হয়েছে।” এমন অভিযোগে ও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে কয়লা মন্ত্রক, ইসিএল ও জেলা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন বলেও জানান বংশগোপাল।
সিপিএমের অভিযোগ, ওই দু’টি গ্রামের নতুন ভোটার তালিকায় বীরভূম ও আসানসোল পুর-এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাদেরও নাম আছে। বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারিও একই অভিযোগ করে মাস ছয়েক আগে সরব হয়েছিলেন। জিতেন্দ্রের অভিযোগ, “আমরা সমীক্ষা করে দেখেছি, ৩৭ জন বহিরাগতের নাম আছে।” আসানসোল দক্ষিণের বিজেপির বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালও জানিয়েছেন, বেশ কিছু নাম তাঁরা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন।
কিন্তু বিরোধীদের কথা মতো কী ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলের ভোটার তালিকায় ‘প্রভাব’ খাটাতে পারে? বংশগোপাল, জিতেন্দ্রদের অভিযোগ, ভোটার তালিকায় নাম সংশোধন বা সংযোজনের জন্য বিভিন্ন এলাকায় শিবির হয়। এই দু’টি গ্রামের ক্ষেত্রেও তা হয়েছিল। গ্রামে মূলত ব্লক প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এই শিবিরগুলি আয়োজিত হয়। আর সেখানেই প্রভাব খাটিয়েছে তৃণমূল, অভিযোগ বংশগোপালদের। অভিযোগে আমল দেয়নি তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বক্তব্য, “বিরোধীরা সবেতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এটা পুরোপুরি প্রশাসনিক বিষয়। সেখানে আমরা মাথা গলাতে যাব কেন?”
এ দিকে, শোনপুর বাজারি প্রকল্পের পার্সোনেল ম্যানেজার আবির মুখোপাধ্যায় জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। নতুন ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখে জানানোর জন্য ইসিএল পাণ্ডবেশ্বর ব্লক প্রশাসনের কাছে আর্জিও জানিয়েছে। প্রকল্পের এক আধিকারিক জানান, গ্রাম কমিটির এ বিষয়ে তদারকি করার এক্তিয়ার নেই। গ্রাম কমিটির কাজ হল, যে সব এলাকা অধিগ্রহণ করা হবে, সেখানে কোথায় কী রয়েছে, কোথায় কোন পাড়া তৈরি ও কার বাড়ি কোথায় হবে, তা নিয়ে সহযোগিতা করা। সংস্থার ভূমি দফতর বিষয়টি তদারকি করে।
পুনর্বাসনের জন্য অধিগ্রহণ করা এলাকায় বাসিন্দাদের প্রত্যেককে ভূমি দফতরের কাছে লিখিত আবেদন করতে হবে। সেটা করার জন্য এলাকার ভোটার তালিকায় নাম থাকতে হবে। তার ভিত্তিতে ভূমি দফতর বিষয়টি খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। ইতিমধ্যেই দু’টি গ্রাম থেকে প্রায় সাড়ে সাতশো জন পুনর্বাসন পেতে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক জানান, ভোটার তালিকায় নাম ঠিক না ভুল, সেটা দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।
জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) এস পুন্নমবলমের প্রতিক্রিয়া, “চলতি বছরের ১ নভেম্বর ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশিত হয়েছে। জানুয়ারিতে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে। মধুডাঙা ও ভাটমোড়াতে কিছু বহিরাগতের নাম নথিভুক্ত হওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে।”