দুই উদ্যোগী সুমন জানা ও সৌরভ বসু।—বিশ্বনাথ মশান।
পড়াশোনা, কাজের সুবাদে দেশে নানা শহরে গিয়েছেন তাঁরা। অনেক জায়গাতেই দেখেছেন, পোশাক বা নানা জিনিসপত্রের মতো মুদির সামগ্রী কেনা যায় অনলাইনে। কিন্তু তাঁদের নিজের শহরে এমন সুবিধা নেই। আক্ষেপ মেটাতে দুর্গাপুরে অনলাইনে মুদির জিনিসপত্র বিক্রির ব্যবসা খুলে বসেছেন শহরের দুই যুবক।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ যেন আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। দোকানে গিয়ে জিনিস কেনার মতো সময় নেই অনেকের হাতেই। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গাড়ি থেকে আসবাব, অনেক কিছুই কেনাবেচা চলছে অনলাইনে। দুর্গাপুরের বছর চব্বিশের সৌরভ বসু ও বছর আঠাশের সুমন জানা জানান, দুর্গাপুর শহরে হাতে গোনা বাজার। বহু বাসিন্দাকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট করে মুদির দোকান থেকে জিনিস কেনা অনেকের পক্ষেই কষ্টসাধ্য। সেই ভাবনা থেকেই ‘অনলাইন গ্রসারি কার্ট’ চালু করেছেন তাঁরা।
দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের বাসিন্দা সৌরভ একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক ও হর্ষবর্ধন রোডের সুমন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করেন। কলকাতায় একসঙ্গেই থাকেন দু’জনে। প্রথমে পড়া ও পরে কাজের সুবাদে তাঁরা হায়দরাবাদ, দিল্লি, বেঙ্গালুরুতে ঘুরে এসেছেন। সব জায়গায় দেখেছেন, অনলাইনে মুদির সামগ্রীও ঘরে-ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কিন্তু নিজের শহরে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। ১০ জুন থেকে তাঁরা চালু করেছেন এই ব্যবসা। প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা তৈরি করে ‘অর্ডার’ দিলেই এক থেকে দু’দিনের মধ্যে জিনিস পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানান তাঁরা। যদিও এখনও পর্যন্ত তেমন অর্ডার পাননি। সৌরভ ও সুমন জানাচ্ছেন, এই কারবার চালানোর জন্য দুর্গাপুরে সাত জনের একটি দল গড়েছেন। তাঁরা বাড়ি-বাড়ি জিনিস পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘শুধু চাকরি নয়, ব্যবসা করেও লাভ করতে চাই। তার সঙ্গে আরও কয়েক জনের কাজের সুযোগ করে দিতে চাই।’’ তাঁরা আরও জানান, চারশো টাকার উপরে বাজার করলে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য কোনও টাকা দিতে হবে না। এ ছাড়া বেশি মূল্যের বাজার করলে আকর্ষণীয় ছাড়ও দেওয়া হবে। শিল্পশহরে এমন উদ্যোগের কথা শুনে খুশি অনেকেই। সিটি সেন্টারে নন-কেম্পানি এলাকায় থাকেন দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের প্রাক্তন কর্মী সুনির্মল রায় ও তাঁর স্ত্রী বাসন্তী রায়। তাঁরা জানান, দুই ছেলের এক জন থাকে আমেরিকায়, অন্য জন নাগপুরে থাকে। বাড়িতে আর কেউ নেই। তাঁরা বলেন, ‘‘আমরা নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড উল্লেখ করে অর্ডার দেব। তা হলে আর ঠকার ভয় থাকবে না। বাড়িতে বসেই জিনিস পাওয়া যাবে।’’