দেওয়া হচ্ছে নিয়োগপত্র। বুধবার রবীন্দ্র ভবনে। নিজস্ব চিত্র
রাজ্য সরকারের ‘অতিথি শ্রমিক কর্ম সুযোগ’ প্রকল্পে বুধবার আসানসোলের রবীন্দ্র ভবনে এক অনুষ্ঠানে একশো জন পরিযায়ী শ্রমিককে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানাল পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের দাবি, এমন উদ্যোগ রাজ্যে এই প্রথম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি জানান, দেশের নানা প্রান্তে কর্মরত জেলার বাসিন্দা প্রায় ১৪ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরেছেন। তাঁরা অনেকেই এই মুহূর্তে পুরনো কর্মস্থলে ফিরতে চাইছেন না। অনেকেই আবার ভিন্-রাজ্যে কাজ হারিয়েছেন। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘এ দিন একশো জন অতিথি শ্রমিককে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বণিক সংগঠনের মধ্যস্থতায় জেলার শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিতে তাঁদের নিয়োগ করা হবে। রাজ্যে এমন উদ্যোগ প্রথম।’’
এ দিন নিয়োগপত্র পেয়ে খুশি পরিযায়ী শ্রমিকেরা। হায়দরাবাদের একটি বিনোদন পার্কে প্রশিক্ষকের কাজ করতেন অণ্ডালের বাসিন্দা অরবিন্দ বিশ্বকর্মা। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় চার বছর ওখানে কাজ করেছি। লকডাউনের জেরে চাকরি গিয়েছে। মা-বাবাকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েছিলাম। চাকরির নিয়োগপত্র পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।’’ রাজস্থানের উদয়পুরে একটি ‘মার্বেল কাটিং’-এর সংস্থায় কাজ করতেন রানিগঞ্জের বাসিন্দা বিকাশ মাজি। তিনিও জানান, রাজস্থানে কাজ হারিয়েছিলেন। এই নিয়োগপত্র পেয়ে তিনি আশাবাদী।
এই পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজে নিয়োগ করতে পেরে খুশি শিল্পোদ্যোগীরাও। জামুড়িয়ার অজয় খেতান, রানিগঞ্জের রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান, আসানসোলের বীরেন্দ্র ঢল, নিয়ামতপুরের সচিন ভালোটিয়ারা বলেন, ‘‘বাড়ির ছেলেদের কাজ দিতে পেরে ভাল লাগছে।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিডিও-দের মাধ্যমে প্রতিটি ব্লকের পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মদক্ষতা-সহ নানা তথ্য নিয়ে ‘ডেটা ব্যাঙ্ক’ তৈরি করা হয়েছে। তা দেখেই কাজের ব্যবস্থা হচ্ছে।
এ দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন। তিনি জানান, গত ১ মে থেকে বরাকরের ডুবুরডিহি সীমান্ত পেরিয়ে রাজ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক এসেছেন। তাঁদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হয়। তাঁদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি, ওই শ্রমিকদের বাসে করে নিজেদের জেলায় পাঠানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ছিলেন আসানসোল পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি, দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র দিলীপ অগস্তি ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুভদ্রা বাউড়ি।