ঘোষণার মুখে জেলার নাম নিয়ে আপত্তি

জেলা ভাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন সকলেই। কিন্তু নতুন জেলা হিসেবে ঘোষিত হওয়ার দিন চারেক আগেও গোটা পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া নিয়ে সরব বিরোধীরা।

Advertisement

সুশান্ত বণিক ও সুব্রত সীট

আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩৭
Share:

জেলা ভাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন সকলেই। কিন্তু নতুন জেলা হিসেবে ঘোষিত হওয়ার দিন চারেক আগেও গোটা পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া নিয়ে সরব বিরোধীরা। শহরের নামেই জেলার নাম হওয়া উচিত ছিল— আসানসোল ও দুর্গাপুর, দুই শহরেই দাবি তুলেছে নানা দল। কোথাও আবার এলাকা কম হওয়া, বৈঠকে না ডেকেই সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো নানা অভিযোগও তোলা হয়েছে।

Advertisement

নতুন জেলার ‘পশ্চিম বর্ধমান’ নামকরণের বিরোধিতায় আসানসোলে ৬ এপ্রিল প্রতীকি অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। দলের ব্লক সভাপতি শাহ আলম খান জানান, আসানসোল আদালত লাগোয়া গাঁধী মূর্তির কাছে এই কর্মসূচি হবে। কংগ্রেস নেতা তথা কাউন্সিলর অভিজিৎ আচার্যের দাবি, শিল্পাঞ্চলের নিজস্ব পরিচিতি থাকা সত্ত্বেও নামকরণের ক্ষেত্রে তা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা রাজ্যপালের কাছে নতুন জেলার নাম পরিবর্তনের দাবি জানাব।’’

বিরোধিতায় রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত না নিলেও বিজেপি-ও জেলার নাম নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছে। দলের আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় দাবি করেছেন, নতুন জেলার নাম আসানসোল হলে ভাল হতো। বিজেপি-র আসানসোল জেলা সভাপতি তাপস রায়ের বক্তব্য, ‘‘এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। রাজ্য সরকারের উচিত ছিল নামকরণের আগে নাগরিকদের মতামত নেওয়া।’’ দুর্গাপুরের বিজেপি নেতা অমিতাভ মুখোপাধ্যায় আবার বলেন, ‘‘নতুন জেলার ক্ষেত্রে বর্ধমান শব্দটির গুরুত্ব থাকছে না। নতুন জেলার নাম আসানসোল-দুর্গাপুর হলেই ভাল হতো।’’

Advertisement

এরই মধ্যে আসানসোলের ঐতিহ্য রক্ষার দাবিতে সোমবার সিপিএম শহরে একটি মিছিল করে। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলার নামকরণ নিয়ে আমরা কিছু বলতে চাইছি না। তবে আসানসোলের ঐতিহ্য ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মানুষের পথে নামা উচিত।’’ দুর্গাপুরের সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায়সরকার আবার জানান, প্রাথমিক ভাবে নতুন জেলার নাম আসানসোল হবে বলে বলা হয়েছিল। তখন তাঁরা দাবি করেন, সঙ্গে দুর্গাপুরের নামও থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত যে নাম রাজ্য চূড়ান্ত করেছে তা শিল্পাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিতে বেমানান। রবিবার থেকে আমরা এর প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেছি।’’

দুর্গাপুরের কংগ্রেস নেতা দেবেশ চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘জেলা ভাগের প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে সর্বদল বৈঠক হয়নি। আমাদের প্রবীণ দুই নেতা একপ্রকার জোর করে জেলা প্রশাসনের এক বৈঠকে ঢুকে পড়ে জানতে পারেন, সিদ্ধান্ত যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, বুদবুদকে গ্রামীণ বর্ধমানে পাঠিয়ে ও আসানসোলকে জেলা সদর করে দুর্গাপুরের গুরুত্ব কমানো হল। জেলার নাম আসানসোল ও দুর্গাপুর মিলিয়ে হলেই ভাল হতো বলেও তাঁর মত। তাঁর আরও দাবি, যে ভাবে জেলার সীমানা ঠিক হয়েছে তাতে ভবিষ্যতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনে নতুন জেলা পাশের রাজ্যে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

শাসকদলের নেতারা অবশ্য বিরোধীদের এত অভিযোগ আমল দিতে নারাজ। তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নতুন জেলার নামের মধ্যে পুরনো জেলার ঐতিহ্যের কথাও মাথায় রাখা হয়েছে। মানুষের তো কোনও আপত্তি নেই। সবাই খুশি।’’ দলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনেরও বক্তব্য, ‘‘মানুষের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টায় বিরোধীরা নানা কথা বলছেন। কিন্তু সরকার সব দিক বিচার করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’

এরই মধ্যে দুর্গাপুরের তৃণমূল কাউন্সিলর পল্লবরঞ্জন নাগ ২৯ মার্চ সোশ্যাল মিডিয়ায় দুর্গাপুর কেন জেলা সদর হবে না, সে নিয়ে শহরবাসীকে সরব হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে দলের অন্দরে প্রশ্ন ওঠে। যদিও পল্লববাবু বলেন, ‘‘দুর্গাপুর পরিকল্পিত শহর, জেলা সদর হওয়ার উপযুক্ত। স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে চেয়েছি, শহর গুরুত্ব পাক। এর মধ্যে দলবিরোধী কাজের কোনও প্রশ্ন নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement