চুপি পাখিরালয়ে। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।
পরিযায়ী পাখিদের টানে দূর থেকে পর্যটকেরা আসেন চুপির পাখিরালয়ে। ছাড়িগঙ্গায় নোকাবিহারের সময় দূরবীন, মোবাইল, ক্যামেরায় ওদের উড়ে বেড়ানোর ছবি তুলে আনন্দ পান তাঁরা। পাখিরালয়ে আসা পর্যটকদের জন্য গড়া হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, পিকনিক স্পট, কটেজ, রাস্তা-সহ অনেক কিছু। যার জন্য খরচ হয়ে গেছে কয়েক কোটি টাকা। এ বার ছাড়িগঙ্গায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমায় উদ্বিগ্ন পর্যটকেরা।
শীত পড়লেই মধ্য-উত্তর এশিয়া, ইউরোপ, তিব্বত, সাইবেরিয়া থেকে চুপির পাখিরালয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে পাখির দল। উত্তরবঙ্গ থেকেও বেশ কিছু প্রজাতির পাখি এই জলাশয়ে আসে। তাদের দেখতে শীতের মরসুমে ভিড় জমে পর্যটকদের। কত পাখি আসছে, নতুন কোনও পাখি এল কিনা, এমন নানা তথ্য সংগ্রহে বন দফতর পক্ষীগণনা করে।
ছাড়িগঙ্গা ঘুরে দেখা গিয়েছে, সেখানে বড় অংশ জুড়ে জমে রয়েছে ঘন কচুরিপানা। সম্প্রতি বন দফতরের চার সদস্যের দল পাখিরালয় পরিদর্শন করে। তাঁরা পাখির ঝাঁক না দেখতে পেয়ে হতাশ হন। জানিয়ে দেন, এ বার পাখি অনেক কম এসেছে। তবে শীত বাড়লে পাখির সংখ্যা বাড়বে বলে আশা তাঁদের। কিন্তু এখনও পাখির সংখ্যা তেমন বাড়েনি।
কাটোয়ার রেঞ্জ আধিকারিক শিবপ্রসাদ সিংহ বলেন, ‘‘এখনও খুব বেশি পাখির দেখা মেলেনি। পরিযায়ীদের জন্য চুপির পাখিরালয়ে উপযুক্ত পরিবেশ গড়তে গেলে কিছু কচুরিপানা সরাতেই হবে।’’ তিনি জানান, জানুয়ারির শুরুতেই এই জলাশয়ে পক্ষীগণনা হবে বলে ঠিক হয়েছিল। সে কাজ কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে সমস্ত পাখিরা এ বার মুখ ফিরিয়ে রইল, তারা কি আগামী বছর এই জলাশয়ে আসতে পারে? বন দফরের ওই আধিকারিক জানান, কত পাখি এই জলাশয়ে এসেছে, তা গণনার পরে বোঝা যাবে। তবে পছন্দের পরিবেশ না পেলে পরিযায়ীরা নতুন ঠিকানায় চলে যায়। তাই আগাম কিছু বলা যাবে না।
ছাড়িগঙ্গায় পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন পর্যটকেরা। চুপিতে আসা পর্যটক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দশ বছর ধরে শীতে এখানে আসি। এত কম পাখি আগে কখনও দেখিনি। কচুরিপানা এতই ঘন যে, নৌকা নিয়ে জলাশয়ে ঘুরে বেড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে। যাঁদের জন্য চুপি বিখ্যাত হয়েছে, সেই পরিযায়ী পাখিরা না এলে তো সব আয়োজনই বৃথা। প্রশাসনের হুঁশ ফিরবে কি নাজানি না।’’
পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, চুপির পরিস্থিতির প্রশাসনের নজরে রয়েছে। মাজিদা পঞ্চায়েত কিছু কচুরিপানা সরিয়েছে। আরও কচুরিপানা সরাতে হবে। এই কাজে সাংসদ অর্থসাহায্যের আশ্বাস দিলেও এখনও তা মেলেনি। তিনি বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে কিছু অর্থসাহায্য করে আরও কচুরিপানা সরানোর চেষ্টা করব।’’