এই সেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। নিজস্ব চিত্র।
এক গ্রামবাসীর দান করা জমিতে গড়ে উঠেছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। কিন্তু শৌচাগার গড়ার জায়গা নেই। ফলে, ওই কেন্দ্রে আসা শিশু হোক বা কর্মী— সকলকেই সমস্যায় পড়তে হয় বলে দাবি দুর্গাপুরের কালিগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দাদের। তাঁরা অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন।
কালিগঞ্জ গ্রামটি দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের জেমুয়া পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, স্থানীয় বাসিন্দা প্রয়াত শক্তিপদ পরামানিকের স্মৃতিতে তাঁর স্ত্রী আশালতার দান করা জমিতে কালিগঞ্জ গ্রামে এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি গড়ে উঠেছে। শিশু, প্রসূতি মিলিয়ে মোট ৫৫ জনের রান্না করা খাবার দেওয়া হয় সেখান থেকে। এই কেন্দ্রে এক জন কর্মী ও এক জন সহায়িকা রয়েছেন। মাত্র একটি ঘর। সে ঘরেই রান্না এবং পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়। বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। শৌচাগারও না থাকায়, কর্মী-সহায়িকা বা শিশু ও কেন্দ্রে আসা কোনও মহিলা— কারও কোনও প্রয়োজন হলে, যেতে হয় পাশের গ্রাম শঙ্করপুর প্রাথমিক স্কুলের শৌচাগারে। এ ছাড়া, আর কোনও উপায় নেই বলে জানালেন বাসিন্দারা।
অভিভাবক মুনমুন মুদি বলেন, “এখানে বাচ্চাকে পাঠাতে সাহস পাই না। একটি ঘরেই উনুন জ্বলছে। সেখানেই বাচ্চাদের বসার ব্যবস্থা। শৌচাগার নেই। এ সব সমস্যা মিটলে, তবেই আমরা নিশ্চিন্ত মনে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে পারব।” কর্মী মঞ্জুশ্রী কুণ্ডু বলেন, “প্রায় দু’বছর বন্ধ ছিল কেন্দ্রটি। এখন আবার রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। শিশুর সংখ্যাও বাড়ছে একটি, দু’টি করে। ‘স্টোররুম’ও নেই। একটি ঘরেই রান্নার সামগ্রী রাখতে হয়। উনুনে রান্না হয়। মেঝেতে শিশুদের বসানোর জায়গা নেই। শৌচাগার না থাকা একটা বড় সমস্যা তো বটেই।” সহায়িকা জয়ন্তী মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ ভাবে হয় নাকি! হঠাৎ কারও দরকার পড়লে মাঠে যেতে হবে। না হলে তাকে বাড়ি চলে যেতে হবে। একটি অস্থায়ী রান্নাঘর ও শৌচাগার অবিলম্বে করে দিলে সমস্যা মেটে।”
দুর্গাপুর-ফরিদপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ (বিদ্যুৎ) তথা স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য স্বাধীন ঘোষ জানান, ওই কেন্দ্রে আলাদা শৌচাগার বা রান্নাঘর গড়ে তোলার মতো জায়গা নেই। পরামানিক পরিবারের দান করা জায়গায় কেন্দ্রটি গড়ে উঠেছে। ওই পরিবারের কাছে আর একটু জমি দান করার আর্জি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, “জায়গা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। জায়গা পেলেই শৌচাগার বা রান্নাঘর তৈরি করার ব্যবস্থা করা হবে।”
এই সমস্যা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে পরামানিক পরিবারের তরফে গৌতম বলেন, “শিশুরা যাতে পড়াশোনা করতে পারে, তাই ঠাকুরদার স্মৃতিতে জমিটি দেওয়া হয়েছিল। শৌচাগারের জন্য জমি দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। কিন্তু দান করার মতো জমি আর আমাদের নেই। তবে ন্যায্য মূল্যে সরকার যদি জমি কিনতে চায়, তা হলে আমরা ভাবতে পারি।”