ছটপুজো সেরে বাড়ির পথে। বরাকরের রাস্তায়। বেশির ভাগ লোকজনই পরেননি ‘মাস্ক’। ছবি: পাপন চৌধুরী
আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে ছট পুজো নির্বিঘ্নেই পালিত হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। তবে, স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশির ভাগ এলাকাতেই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগ সামনে এসেছে।
দুর্গাপুরের কুমারমঙ্গলম পার্কের লেকে কয়েক হাজার পরিবার ছটপুজো সারেন। গড়ে ১০-১৫ হাজার মানুষের সমাগম হয় প্রতি বছর। একই ভাবে দামোদরের বীরভানপুর ঘাটেও কয়েক হাজার মানুষের সমাবেশ হয়। এ ছাড়া দুর্গাপুর শহরের ভাবা রোড লাগোয়া জলাশয়, সগড়ভাঙার বড় জলাশয়, এমএএমসি টাউনশিপ সংলগ্ন অর্জুনবাঁধ জলাশয়-সহ নানা জায়গায় অনেকে ছটপুজো সারেন। তবে এ বার কুমারমঙ্গলম পার্কের লেকে ও দামোদরের বীরভানপুর ঘাটে অন্য বছরের তুলনায় কম ভিড় হয়েছিল। এ দিকে, আসানসোল শিল্পঞ্চলে বার্নপুরে দামোদর নদ, আসানসোলের নুনিয়া, গাড়ুই নদী, ঝাড়খণ্ড-পশ্চিমবঙ্গ সীমানায় বরাকর নদের পাড়ে এবং প্রায় ৪৫০টি জলাশয়ে ছট পালিত হয়।
শুক্রবার সূর্যাস্তের সময় ও শনিবার সূর্যোদয়ের সময় সূর্যদেবকে অর্ঘ্য প্রদান করেন ছটব্রতীরা। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুজো করার নির্দেশ তো ছিলই। তা ছাড়া, ভিড় এড়াতে অনেকে ছাদে গামলা বা অন্য কোনও বড় পাত্রে জল রেখে পুজো সারেন। কেউ বা বাড়ির উঠোনে বা বাগানে খাল কেটে জলের ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া, পুলিশের তরফ থেকে ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কুমারমঙ্গলম পার্কে লেকের এক-একটি ঘাটে পাঁচ জনের বেশি নামতে দেয়নি পুলিশ। তা ছাড়া পার্কের ঢোকার ক্ষেত্রেও ছটব্রতীদের পরিবারের লোকজন ছাড়া বাইরের কাউকে সেভাবে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ‘দুর্গাপুর ইস্পাত নগরী মহাছট পুজো সেবা সমিতি’র তরফে রাজেশ প্রসাদ জানান, পুলিশকে সহযোগিতা করেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে প্রথম থেকেই ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কড়া মনোভাব নিতে হয়। ফলে, অন্য বারের তুলনায় পার্কে ভিড় ছিল অনেক কম।
বীরভানপুর ঘাটে প্রতি বছরের মতো এ বারেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। যাতে কেউ কোনও ভাবেই দামোদরের গভীরে চলে যেতে না পারেন, সে জন্য ঘাট থেকে কিছুটা দূরে শালের খুঁটি পুঁতে বেড়া দেওয়া হয় এবং তা জাল দিয়ে ঘিরেও দেওয়া হয়েছিল। তবে ঘাটে পুজোর সময় অনেকে ও দামোদরের পাড়ে দর্শনার্থীদের অনেকে দূরত্ববিধি মানেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকে ‘মাস্ক’-ও পরেননি। দুর্গাপুর পুরসভার ৪ নম্বর বরো চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘যতটা সম্ভব মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই উৎসব পালেন করেছেন।’’
পাশাপাশি, দীপাবলি ও কালীপুজোর তুলনায় শুক্রবার রাতে ও শনিবার ভোরে তুলনায় বেশি সংখ্যায় বাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিছু এলাকায় ডিজে-ও বেজেছে। যদিও পুলিশের দাবি, টহলদার দল খবর পেলেই সেখানে গিয়ে শব্দ-উপদ্রব বন্ধ করেছে। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন বলেন, ‘‘ঘাটগুলিতে পুলিশি নজরদারি ছিল। প্রস্তুত ছিল বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরও। কোথাও কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’’