প্রতীকী ছবি।
‘ন্যাশানাল কোলফিল্ড সিটিজেন্স ফোরাম’-এর উদ্যোগে উখড়ায় ‘সহজপাঠ’ নামে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র শুরু হয়েছে। ‘স্কুলছুট’ রুখতে এই উদ্যোগ বলে ফোরামের তরফে জানানো হয়েছে।
ফোরাম সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮-র জুলাই মাসে ‘স্কুলছুট’ হতে বসা পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ১০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে শনি ও রবিবার সহজপাঠের পথচলা শুরু হয়। শনিবার বিকেলে দু’ঘণ্টা ও রবিবার সকালে তিন ঘণ্টার ক্লাস নেওয়া হয়। শনিবার শুধু নাচ শেখানো হয়। রবিবার পড়ুয়াদের বিভিন্ন প্রশ্নের দেওয়ার পাশাপাশি, তা শিখিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া, ক্যারাটে, আঁকা ও ইংরেজিতে কথা বলা শেখানো হয়। ইংরেজিতে কথা বলা শেখা প্রথম শ্রেণি থেকেই বাধ্যতামূলক।
এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে খান্দরা কলেজে পড়ছেন রাজলক্ষ্মী বাউরি ও কুমকুম বাউরিরা। রাজলক্ষ্মীরা জানান, তাঁরা বর্তমানে প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। নানা কারণে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলে যাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সহজপাঠ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু হচ্ছে জানতে পেরে, তাঁরা দু’জনেই সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন। রাজলক্ষ্মীর মা বছর দু’য়েক আগে ও তারও আগে কুমকুমের বাবা ও মা মারা গিয়েছেন। কুমকুম দিদা ও দাদুর কাছে থাকেন। রাজলক্ষ্মী ও কুমকুম জানান, বর্তমানে তাঁরা দু’জন দৈনিক এক ঘণ্টা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের গ্রন্থাগার খোলা রাখেন। দু’জনকেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের তরফ থেকে তাঁদের পাড়ার ‘ক্যাপ্টেন’ করা হয়েছে। ক্যাপ্টেন হিসেবে পাড়ার দুঃস্থ পরিবারের পড়ুয়াদের বাড়িতে গিয়ে লেখাপড়ার খোঁজখবর নিয়ে সাহায্য করতে হয়। আয়োজক সংস্থার তরফে স্বর্ণালী দে, সৌম্যদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা জানান, কেউ যাতে স্কুলছুট না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রেখে ও পড়াশোনাকে আকর্ষণীয় করতে বিনাখরচে পঠনপাঠনের সঙ্গে ক্যরাটে-সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ১০টি পাড়ায় এগারো জন পড়ুয়াকে (নবম শ্রেণি থেকে ক্যাপ্টেন করা হয়) ক্যাপ্টেন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ছ’জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ন্যূনতম পারিশ্রমিকে এই কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই শিক্ষিকা অর্পিতা রায় ও শৈলজা মুখোপাধ্যায় জানান, ১৮০ জন পডুয়াকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
নবম শ্রেণির শিবা বাউরি, দ্বাদশ শ্রেণির নেহা বাউরি, দশম শ্রেণির পড়ুয়া সোমা বাউরিরা জানিয়েছে, সহজপাঠ না থাকলে ‘লকডাউন’-এর সময় তাদের স্কুলছুট হতে হত। বিডিও (অন্ডাল) সুদীপ্ত বিশ্বাস বলেন, “খুবই ভাল উদ্যোগ। তাঁদের কিছু প্রয়োজন হলে, আমরা সহযোগিতা করব।”