পড়ে রয়েছে দেহ। বৃহস্পতিবার কাঁকসার কাঞ্চনপুর গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
মোটরবাইকে আসা কিছু যুবকের মধ্যে বচসা হচ্ছে অজয়ের পাড়ে সোনাঝুরির বনে, দেখেছিলেন কিছু বাসিন্দা। সেখান থেকে দুই যুবকের দেহ উদ্ধার হল কাঁকসার বিদবিহারের কাঞ্চনপুর গ্রামে।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, বেআইনি লোহা কারবারে গোলমালের জেরে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কমিশনরাটের একটি সূত্রের খবর, বিভিন্ন দুষ্কর্মে অভিযুক্ত শেখ হামিদুল (২৮) ও শেখ নজরুল (৩০) নামে ওই দুই যুবক পুলিশের চর হিসেবেও কাজ করত। খুনের পিছনে তার কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দিন ঘটনাস্থলে যান ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী, এসিপি (কাঁকসা) কমল বৈরাগ্য-সহ পুলিশের কর্তারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ কাঞ্চনপুরের অজয়ের পাড় লাগোয়া শ্রীরামপুর ঘাটের কাছে সোনাঝুরি গাছে ঘেরা জায়গায় জনা দশেক লোককে দেখতে পান কিছু বাসিন্দা। তাদের মধ্যে বচসা থেকে ধস্তাধস্তি চলছিল, দাবি তাঁদের। পরে হামিদুল ও নজরুলের দেহ মেলে সেখানে। তাঁদের গলায় গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, ঘটনার পরে আততায়ীরা মোটরবাইকে চেপে বীরভূমের দিকে পালায়। পুলিশে খবর দেন বাসিন্দারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘সকালে ঘটনাস্থলের অদূরে রাস্তা দিয়ে বহু মানুষ মোটরবাইক, সাইকেল নিয়ে অজয় পেরিয়ে বীরভূমে যান। ঘটনাস্থল থেকে ওই রাস্তার দূরত্ব মেরেকেট একশো ফুট। জনবসিত রয়েছে পাঁচশো মিটারের মধ্যে। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বাসিন্দারাও।’’
ওই দুই যুবকের বাড়ি লাউদোহার রাঙামাটি গ্রামে। মৃতদের পরিবারের দাবি, দু’জনই ঝাঁঝরা কোলিয়ারিতে রক্ষীর কাজ করতেন। এ দিন সকালে দু’জন বাজার করেন। তার পরে তাঁরা একটি মোটরবাইকে বেরিয়ে পড়েন। হামিদুলের স্ত্রী সান্ত্বনা বিবি বলেন, ‘‘সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আমরা দুঃসংবাদ পাই। কেন এমন ঘটল বুঝতে পারছি না!’’ পরিজনদের দাবি, লোহা কারবারে জড়িত দুর্গাপুরের বেনাচিতি এলাকার এক ব্যক্তির হাত রয়েছে এই ঘটনায়। ঘটনার পরে দু’জনের মোটরবাইকটির হদিস মেলেনি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হামিদুল ও নজরুল বেআইনি লোহা কারবারে অভিযুক্ত ছিলেন। মূল্যবান কেব্ল চুরি চক্রেও তাঁদের যোগ ছিল বলে অভিযোগ। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, বেশ কয়েক মাস ধরে ওই দু’জন পুলিশকে তথ্য জোগানোর কাজ করছিল। কয়েক মাস আগে একটি চক্রকে পাকড়াও করার ক্ষেত্রে তাঁরা সাহায্য করেছিলেন। খুনের সঙ্গে সে সবের যোগ আছে কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান ওই পুলিশকর্তা। বেআইনি কোনও কারবারে গোলমালের জেরে এমনটা ঘটেছে কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’