প্রতীকী ছবি।
গ্রামে ভোরের নমাজ কিছুক্ষণ আগে হয়ে গিয়েছে। কাজে বেরোচ্ছিলেন বাসিন্দাদের অনেকেই। আচমকা খবর এল, মৃত্যু হয়েছে পড়শি দুলাল মণ্ডলের (৭০)। লোকবল থেকে অর্থ, দাহ করতে নানা সমস্যায় পড়েছেন পরিজন। রবিবার পূর্ব গলসির নতনুপল্লিতে সব কাজ ফেলে রেখে প্রবীণের শেষযাত্রায় এগিয়ে এলেন শেখ নিজাম, মহম্মদ নজরুল শেখেরা। শেষমেশ তাঁদের মতো জনা ষাটেক যুবকের উদ্যোগে দুলালবাবুর শেষকৃত্য হল নির্বিঘ্নেই।
ওই গ্রামে ৩০৩টি পরিবারের মধ্যে মাত্র তিন ঘর হিন্দু ধর্মাবলম্বী। দুলালবাবুর ছেলে, পেশায় ট্রাকের খালাসি লক্ষ্মণবাবু জানান, বাবার মৃত্যুর পরে শেষকৃত্যের টাকা কোথা থেকে আসবে, কারা দু’কিলোমিটার দূরের নাউলেশ্বর শ্মশানে দেহ নিয়ে যাবে, খাট, ফুল জোগাড় হবে কী ভাবে, এ সব চিন্তায় পড়েছিলেন তাঁরা। তবে গ্রামবাসী নজরুল, নাসিরউদ্দিন মণ্ডল, সাইফুল শেখদের সৌজন্যে তাঁর দুশ্চিন্তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ওঁরাই এগিয়ে এসে সব দায়িত্ব নিয়ে নেন। নাসিরউদ্দিনেরা বলেন, ‘‘ওই তিন পরিবার আমাদেরই পড়শি। ওঁদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। শ্মশানযাত্রার জন্যও লোক ছিল না। বিপদে পড়শির পাশে আমরা থাকব না তো কারা থাকবে?’’
কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রামেই চাঁদা তোলা হয়। আসে খাট, ফুল, দাহের জন্য কাঠ।
এর পরে দীর্ঘ দিনের পড়শি, দুলালবাবুকে কাঁধে করে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া তো বটেই, চিতা সাজানো-সহ নানা কাজে হাত লাগান নিজামেরা। দাহ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায় তাঁদের। মুখাগ্নি করে লক্ষ্মণ তাঁদের বলেন, ‘‘তোমরা পাশে না থাকলে কী করে যে সব হত, জানি না।’’ গ্রামবাসীর এই ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন গলসি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বাসুদেব চৌধুরীও।