শিলান্যাসের ফলক রয়ে গিয়েছে। পিছনে গড়ে উঠছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবন। ছবি: উদিত সিংহ।
তিন বছর আগে মা ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র (মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার সেন্টার) গড়ার জন্য ঘটা করে শিলান্যাস হয়েছিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের কাছে। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিতর কিংবা তার কাছাকাছি জমি না মেলায় প্রকল্পটি আপাতত হিমঘরে।
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শিলান্যাসের ফলকটা রাস্তার ধারে থেকে গিয়েছে। কিন্তু মা ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রে জন্য একটা ইটও তিন বছরে গাঁথা হয়নি। প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী, সেটাও অজানা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। স্বাস্থ্য দফতরের এক সচিব বলেন, “ওই প্রকল্পের জন্য যে পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন, তা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বা তার কাছাকাছি কোথাও নেই। সে জন্য ওই প্রকল্প আপাতত স্থগিত রয়েছে। এর ভবিষ্যৎ কী সেটাও আমাদের জানা নেই।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পঞ্চায়েত ভোটের আগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের জমির উপরে তড়িঘড়ি ওই মা ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রের শিলান্যাস করা হয়। ২০১৩ সালের ১২ মার্চ, শিলান্যাসের সময় উপস্থিত ছিলেন জেলার দুই মন্ত্রী মলয় ঘটক ও স্বপন দেবনাথ। তাঁদের নাম এখনও ফলকে জ্বলজ্বল করছে। তারপরেও ফলকটুকু ছাড়া কিছুই প্রায় কাজ এগোয়নি সুরক্ষা কেন্দ্র গড়ার। কেন? স্বাস্থ্য কর্তারাই জানান, জমির ব্যবস্থা না করেই প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়াছিল। যেখানে শিলান্যাস ফলকটি রয়েছে, সেই জায়গাটি বর্ধমান বিদ্যালয়ের কাছ থেকে পাওয়া যাবে বলে জেলার মন্ত্রীরা সেই সময় আশা করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবন গড়ে উঠছে। ফলে সেই জমি হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে।
এরপরে, নার্সিং ট্রেনিং কলেজের পিছনে একটি জায়গা চিহ্নিত করে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সেই জায়গাটি ঘেরা হয়। কিন্তু রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জায়গাটি দেখতে এসে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে দূরে কোথাও মা ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র গড়া যাবে না। তাঁরা জানান, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরের ভিতর কিংবা কাছাকাছি কোনও জায়গায় এই প্রকল্প গড়া হলে তবেই স্বাস্থ্য দফতর অনুমোদন দেবে। এরপরেই বিশ বাঁও জলে চলে যায় ওই প্রকল্প।
কারণ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের ভিতর মা ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় জমি নেই। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কয়েক কোটি টাকা খরচ করে হাসপাতালে আট তলা একটি ভবন তৈরি হবে, সেই ভবন তৈরির জায়গা নিয়েই সমস্যা হচ্ছে। সেখানে মা ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র কী ভাবে তৈরি হবে? যদিও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সুপার সুকুমার বসাক বলেন, ‘‘মা ও শিশু সুরক্ষা প্রকল্প নিয়ে জমি ও দূরত্বের সমস্যা থাকায় স্বাস্থ্য দফতর আপত্তি জানিয়েছিল। সে জন্য আমরা নতুন করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিতর ওই কেন্দ্র তৈরির জন্য একটি প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) পাঠিয়েছি। স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’’
জেলার মন্ত্রী তথা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি স্বপন দেবনাথ অবশ্য অন্য বক্তব্য শুনিয়েছেন। তাঁর কথায়, “হাসপাতালের ভিতর আট তলা ভবন তৈরি হবে। সেখানেই ওই কেন্দ্র তৈরি করা হবে।’’ যা শুনে স্বাস্থ্য দফতরের ওই সচিব মুচকি হেসে বলেন, “কোনওটাই বাস্তব নয়। সে জন্য আমরা প্রসূতি ও শিশু বিভাগকে আরও আধুনিক করে তোলার জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করেছি।’’
ফলে মা ও শিশুর পৃথক সুরক্ষা কেন্দ্র না হোক আধুনিক প্রসূতী ও শিশু বিভাগের ভরসাতেই শহরবাসী।