ফড়ের দৌরাত্ম্য রাতে, নালিশ দুর্ঘটনায়

ধান বিক্রির প্রক্রিয়ায় ফড়েদের দৌরাত্ম্য আটকাতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো থেকে পুলিশের পাহারা, নানা ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০৬
Share:

প্রতীকী চিত্র।

ধান বিক্রির প্রক্রিয়ায় ফড়েদের দৌরাত্ম্য আটকাতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো থেকে পুলিশের পাহারা, নানা ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। তাই আর দিনের আলোয় নয়, রাতে গ্রামের ছোট চাষিদের কাছে ধান কিনে ফড়েরা দূরবর্তী চালকলে পাচার করছে বলে অভিযোগ উঠল। বুধবার রাতে কাটোয়ার মুস্থুলিতে একটি দুর্ঘটনার পরে এই অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত ৯টা নাগাদ একটি নিমন্ত্রণবাড়ি থেকে সাইকেলে মুস্থুলি ফিরছিলেন সুভাষ বৈরাগ্য (৩৮)। সঙ্গে ছিল বছর পনেরোর ছেলে দেবাশিস। মুস্থুলি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কাছে পিছন থেকে ধান বোঝাই একটি ট্রাক্টর তাঁদের ধাক্কা দেয়। মৃত্যু হয় সুভাষবাবুর। অল্পের জন্য রক্ষা পায় তাঁর ছেলে।

এর পরেই স্থানীয় কিছু বাসিন্দা রাতে ধান কেনার জন্য ফড়েদের উৎপাতের অভিযোগে সরব হয়েছেন। তাঁদের দাবি, বিকাল হলেই জগদানন্দপুর এলাকায় ফড়েদের আনাগোনা বাড়ছে। মূলত ভাগচাষি ও যে সব বাড়ির সদস্যেরা গ্রামে জমিজমা সামলানোর দায়িত্বে কাউকে রেখে নিজেরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন, তাঁদের বাড়িতে যাচ্ছেন ফড়েরা। তাঁরা বোঝাচ্ছেন, সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি ঝঞ্ঝাটের ব্যাপার। ধানের দাম অনেক পরে পাওয়া যায়। খাদ বাদ দিলে কুইন্টাল পিছু হাতে আসে ৮৬০-৮৮০ টাকা করে। যাতায়াতের খরচের সঙ্গে বস্তা কেনার বাড়তি খরচও রয়েছে সেক্ষেত্রে। এ সবের থেকে তাঁদের কাছে বিক্রি করলে খাদ বাদ দেওয়ার চিন্তা থাকে না, দামও বেশি মেলে বলে পরামর্শ দিচ্ছেন।

Advertisement

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুস্থুলির এক চাষি বলেন, ‘‘বাড়িতে এসে ধান নিয়ে যাওয়ায় আমাদের গাড়ি ভাড়াও লাগছে না। হাতে-হাতে নগদ টাকা পাওয়া যাচ্ছে।’’ এলাকার কিছু বাসিন্দার দাবি, সন্ধ্যার পরে ধান কিনে রাতে রাজ্য সড়ক ধরে তা পূর্বস্থলী বা ভাতারের নানা চালকলে পাঠিয়ে দিচ্ছে ফড়েরা। কাছাকাছি চালকল থাকলেও যেহেতু সেখানে চাষিদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা হচ্ছে, তাই ফড়েরা দূরের চালকলেই ধান বিক্রি করছে বলে দাবি ওই বাসিন্দাদের।

সরকারি শিবিরে ক্ষুদ্র চাষিদের মাধ্যমে তাঁদের কম ধানের সঙ্গে ফড়েরা নিজেদের কিছু ধান বিক্রি করাচ্ছেন বলেও অভিযোগ। বদলে চাষিদের কিছু টাকা দিচ্ছেন। জগদানন্দপুরের প্রধান গৌতম ঘোষাল অবশ্য বলেন, ‘‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, এক জন চাষি সর্বোচ্চ ৪৫ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে পারবেন। আমাদের পঞ্চায়েতে ধান কেনার কেন্দ্রে চাষিদের কাছ থেকে দিনে সর্বোচ্চ ১৮ কুইন্টাল ধান নেওয়া হচ্ছে।’’ রাতে ফড়েদের দাপটের কথা তাঁর জানা নেই বলেও জানান তিনি। কাটোয়ার মহকুমাশাসক সৌমেন পাল জানান, ফড়েদের দাপট রুখতে ইতিমধ্যে সিসিটিভি বসানো হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement