গলসির বাড়িতে শেখ সাইফুল। নিজস্ব চিত্র
বছর কুড়ি ধরে স্ত্রীর মানসিক রোগের চিকিৎসা চলছে। তার মধ্যেই ধরা পড়েছে একমাত্র ছেলের অস্বাভাবিক আচরণ। বছর চব্বিশের ছেলের হাল এমনই যে ছ’বছর ধরে তাকে পায়ে শিকল বেঁধে ঘরবন্দি করে রেখেছেন বছর পঞ্চাশের শেখ নুর ইসলাম।
গলসির বাবলা গ্রামের নুর ইসলামের আক্ষেপ, ঝালমুড়ি বিক্রির টাকায় সংসার, মেয়েদের পড়াশোনা, ছেলে-স্ত্রীর চিকিৎসা চালানো আর সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই ছেলেকে বেঁধে রেখেছেন তিনি।
তবে শেখ সাইফুল জন্ম থেকেই এমনটা ছিল না। রোজগারের তাগিদে ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়ে অসুস্থ হয়ে ফিরে আসে। ক্রমশ হারায় মানসিক ভারসাম্য। নুর ইসলাম বলেন, ‘‘বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কলকাতার বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু কোনও উন্নতি হয়নি। এখন দু’বছর ধরে আর টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারি না।’’ তবে স্ত্রী ফিরোজা আগের থেকে একটু সুস্থ হয়েছেন, ঘরের কাজকর্মও করতে পারছেন বলে তাঁর দাবি।
বর্ধমানের হাই মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে সাইফুল। রোজগারের আশায় আঠারো বছর বয়সে রাজমিস্ত্রি মামা মিনহাজউদ্দিনের সঙ্গে কেরল পাড়ি দেয় সে। কিন্তু বেশি দিন থাকতে পারেনি। মিনহাজউদ্দিন বলেন, ‘‘বাড়ি আসার জন্য প্রায়ই কান্নাকাটি করত। একদিন কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেই ওকে নিয়ে চলে আসি। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতেই ধরা পড়ে মানসিক রোগ।’’
নুর ইসলাম জানান, এখন মাঝেমধ্যেই হিংস্র হয়ে পড়ে সাইফুল। বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। মা, বোনেদের মারধর করে। মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে পালিয়েও যায়। তিনি বলেন, ‘‘এক বার বর্ধমান, আর এক বার গুসকরা থেকে ওকে ধরে এনেছি। নিজেরও বয়স হয়েছে। বাধ্য হয়ে ছেলের পায়ে শিকল পড়িয়েছি।’’
বাবলা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় আলো-আধাঁরি ঘরে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা রয়েছে সাইফুল। ওই ঘরেরই এক কোণে তার শৌচকর্মের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নুর ইসলামের আক্ষেপ, ‘‘কোনও উপায় থাকলে কী নিজের ছেলেকে এ ভাবে রাখতে হয়!’’ সাহায্য না পেলে ছেলের চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি। সাইফুলের বড় বোন, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ফরিদা অবশ্য আশা ছাড়েনি। সে বলে, “দাদা সুস্থ হয়ে গেলেই ঘরে আলো ফিরবে।”
খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন গলসি ২ বিডিও শঙ্খ বন্দ্যোপাধ্যয়। তিনি বলেন, “ওই পরিবারের দুরবস্থার কথা জানা ছিল না। খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।”