নানির সঙ্গে তানিশা। নিজস্ব চিত্র
জন্মের পর থেকেই পায়ে জোর কম। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। তিন বছর বয়সে হারিয়েছে মা। বাবাকেও কোনও দিন দেখেনি সে। কিন্তু কোনও কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি বর্ধমান হাই মাদ্রাসার ছাত্রী তাশিনা খাতুনকে। এ বার দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ৬৯৭ (৮৮ শতাংশ) নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। কিশোরীর সাফল্যে খুশি তার একমাত্র পরিজন নানি।
বর্ধমান শহরের কমলসায়ের নানির সঙ্গেই থাকে তাশিনা। জন্মের তিন বছরের মধ্যে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তার মা। সংসার ছেড়েছেন বাবাও। ফলে ছোট থেকেই তাশিনার একমাত্র আশ্রয় বিধবা নানি রাবেয়া বেগম। তাঁর উপর ভরসা করেই শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখে তানিশা। নাতনির স্বপ্ন সফল করতে দু’কামরার বাড়ির একটি ঘর ভাড়া দিয়ে সংসার চালান রাবেয়া। প্রতিদিন নিয়ম করে নাতনিকে স্কুলে পৌঁছে দেন। সারা দিন থেকে নাতনির সঙ্গে মিড-ডে মিল ভাগ করে খেয়ে বিকেলে ঘরে ফেরেন দু’জনে। তবে দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা কী ভাবে চালাবেন তা নিয়ে ঘুম উড়েছে তাঁর। তিনি বলেন, “জন্ম থেকেই আমার নাতনি ভাল করে হাঁটতে পারে না। যদি কোনও বিপদ হয় সেই ভয়ে স্কুলেই থাকি। আপ্রাণ চেষ্টা করব ওর পড়াশোনা চালাতে।’’
তানিশাদের অনটনের কথা জেনে ফি নিতেন না স্কুলের শিক্ষকেরা। ফাইনালের আগে চার মাস নিজের বাড়িতে ডেকে ওকে পড়িয়েছেন প্রধান শিক্ষক মুন্সী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “পঞ্চম শ্রেণি থেকেই দেখেছি ওর পড়ার খুব আগ্রহ। স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক ওকে সাহায্য করেছেন। আমরা ওর আরও ভাল ফল আশা করেছিলাম।’’ রেজাল্টে সন্তুষ্ট নয় তানিশাও। ইংরাজি ও বাংলা খাতা পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। তাঁর কথায়, “ছোট থেকেই শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখি। পড়াশোনা করে আমার মায়ের (নানি) কষ্ট দূর করব।”
কিন্তু এ বার যদি দূরে স্কুল হয়! নানি বলেন, “আমিই ওকে স্কুলে পৌঁছে দেব। পড়া বন্ধ হতে দেব না। ওই তো ভরসা।”