—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কয়েক মাস আগে আধার কার্ড ‘নিষ্ক্রিয়’ হওয়ার চিঠি পেয়েছিলেন তাঁরা। তার পরেই নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করে কেন্দ্র। দু’টির মধ্যে কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, সে কথা চিন্তা করে আতঙ্ক তৈরি হয় তাঁদের মধ্যে। লোকসভা ভোটের মধ্যেও পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর, মেমারির মতুয়া বাসিন্দাদের মধ্যে সিএএ নিয়ে চর্চা চলছে। ‘জল মেপে’ এগোনোর কথা বলছে তাঁদের নানা সংগঠন। মঙ্গলবার ভোটের ফল কী হয়, নতুন সরকার গঠনের পরে কোনও সিদ্ধান্ত হয় কি না— সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন বলে জানান সংগঠনের নেতারা।
মাস দুয়েক আগে জামালপুর, মেমারি-সহ কয়েকটি এলাকার কিছু বাসিন্দা আধার কার্ড ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়েছে বলে চিঠি পান। তাঁদের অনেকে দাবি করেন, রেশন তোলা বা ব্যাঙ্কের কাজকর্মে তাঁদের আধার-তথ্য কাজ করছে না। কয়েক দিন পরে অবশ্য তা ফের চালু হয়। কেন্দ্রের তরফেও আশ্বস্ত করা হয়, কারও আধার কার্ড বাতিল হচ্ছে না। এর পরেই সিএএ কার্যকর হয়। ভোটের প্রচারে মেমারির রসুলপুরে সভা করতে এসে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে জোর সওয়াল করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার পরেও এলাকার প্রায় কেউই কেন্দ্রীয় পোর্টালে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেননি বলে স্থানীয়
সূত্রের দাবি।
মতুয়াদের সংগঠনের নেতাদের দাবি, নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা থেকে শ’তিনেক জন নাগরিকত্বের আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র আট জন নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেয়েছেন। অনেকের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। স্ত্রী নাগরিকত্ব পেলেও স্বামীর আবেদন খারিজ হয়েছে– এমন খবরও মিলেছে বলে দাবি তাঁদের। তাতে আতঙ্ক দানা বেঁধেছে বাসিন্দাদের মধ্যে।
মতুয়া সংগঠনগুলির দাবি, পূর্ব বর্ধমানে প্রায় ৭ লক্ষ মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। সিএএ-র আবেদন জানানো নিয়ে নানা নেতা-মন্ত্রীর বিভিন্ন রকম দাবিতে তাঁরা উদ্বিগ্ন। দীর্ঘদিন ধরে নিঃশর্ত নাগরিকত্ব চেয়ে এসেছেন তাঁরা। কিন্তু এখন বাংলাদেশে বসবাসের যে নথি চাওয়া হচ্ছে, তা তাঁদের অনেকের কাছেই নেই বলে দাবি। নাগরিকত্বের আবেদন করার পরে তা উপযুক্ত নথির অভাবে খারিজ হয়ে গেলে কী হবে, সে নিয়েই চিন্তা তাঁদের।
মেমারির মহেশডাঙা ক্যাম্পের সন্তোষ বিশ্বাস, আউশগ্রামের আশালতা ঠাকুর থেকে জামালপুরের জৌগ্রামের হীরক মণ্ডলদের প্রশ্ন, “কয়েক দশক আগে বাংলাদেশ থেকে প্রাণ বাঁচাতে যাঁরা এ দেশে এসেছিলেন, তাঁরা কী ভাবে নথি দেখাবেন? তবে ২০০০ সালের পরে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা হয়তো কিছু নথি দেখাতে পারবেন। কিন্তু যাঁরা ১৯৭০-’৭১ সালে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁরা কি এখন এই দেশে শরণার্থী বলে চিহ্নিত হবেন না?”
মতুয়া মহাসঙ্ঘের (যার সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর) পূর্ব বর্ধমানের কার্যকর্তা শৈলেন বিশ্বাস বলেন, “আমরা এখনই কাউকে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে বলছি না। ভোট মিটে গেলে বনগাঁয় গিয়ে আমাদের মহাসঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনা করব।” মতুয়াদের আর একটি সংগঠনের (যার সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর) নেতা হিরন্ময় ঠাকুরের বক্তব্য, “ভোটের মধ্যে কাউকে এ সব নাগরিকত্বের শংসাপত্রের প্রলোভনে পা না দিতে বলা হয়েছে।’’ এই সংগঠনের জেলার কার্যকর্তা সুপ্রভাত গায়েনের দাবি, “জেলার কেউ নাগরিকত্বের আবেদন করেছেন বলে জানা নেই। নতুন সরকার কী ভূমিকা নেয়, সে দিকে নজর থাকবে।”