জলে ডুবে বর্ধমানের ইছলাবাদ ইয়ুথ ক্লাবের মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র
কোথাও মণ্ডপের আশপাশে খোলা মাঠে জল জমে রয়েছে। কোথাও জল জমেছে প্রতিমা রাখার পাটাতনের নীচে। জল জমে রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা বাঁশ, মণ্ডপসজ্জার জিনিসপত্রের মাঝেও। পুজোর আগে প্রতিবারই ভয় দেখায় ডেঙ্গি। এ বার বৃষ্টির মধ্যেও পুরসভা ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুজো উদ্যোক্তাদের সতর্ক করছে না বলে অভিযোগ উঠছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, বর্ধমান পুরসভা ডেঙ্গি-প্রবণ শহর বলে চিহ্নিত। জুলাইয়ে পরপর দু’সপ্তাহে ও অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ বর্ধমান শহরে একটি এলাকা থেকে প্রায় ১৪ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল। জেলার ছ’টি পুরসভার মধ্যে বর্ধমানে গত তিন মাসে ৬০ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টে, বাকি পাঁচটি পুরসভায় ৮ জনের (কালনাতে ছ’টি) ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতর ও রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতর (সুডা) বর্ধমান শহরের উপরে বেশি নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে। পুজো উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, বৃষ্টির জন্য নানা জায়গায় জল জমে রয়েছে। সেই জল বার করতে উদ্যোগী নয় পুরসভা। সেখানে মশার উপদ্রব হচ্ছে। বিপদ বুঝে কোনও কোনও জায়গায় মণ্ডপ শিল্পীদের পাশাপাশি সাফাইকর্মীরা চত্বর পরিষ্কারের কাজও করছেন।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট বলে, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত জেলায় ১০৫ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মেলে। অগস্টে দ্বিগুনের বেশি ডেঙ্গি ধরা পড়ে (২৪৫)। সেপ্টেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০৬ জন। অর্থাৎ দু’মাসেই জেলায় ৪৯০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বৃষ্টি, জমা জল বাড়লে ডেঙ্গিও বাড়বে বলে আশঙ্কা।ইতিমধ্যে সুডা রাজ্যের সব পুরসভাকে ডেঙ্গি নির্মূল করার জন্য উৎসব মরসুমে কী করতে হবে তার নির্দেশিকা পাঠিয়ে দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনও অবস্থাতেই মণ্ডপের আশেপাশে জল জমা থাকবে না। অস্থায়ী স্টলগুলি তৈরির সময়েও গর্ত না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মণ্ডপ তৈরির সময় পুরসভাকে নিয়মিত নজরদারি করতে হবে। মণ্ডপে ও স্টলে জৈব ও অজৈব পদার্থের জন্য পৃথক জায়গা রাখতে হবে।
বর্ধমান শহরের অনেক মণ্ডপের কাজ শেষের দিকে। অধিকাংশ উদ্যোক্তাদের দাবি, মশার উপদ্রব ঠেকাতে পুরসভা কোনও আগাম বার্তা দেয়নি। পাটাতনের নীচে বা মণ্ডপ চত্বরে নানা কারণে গর্ত করা হলে সেখানে জল জমে থাকছে। কোনও কোনও পুজো উদ্যোক্তারা নিজেদের স্বার্থে নিয়মিত মণ্ডপ চত্বর পরিচ্ছন্ন রাখছেন। পুজো কমিটিরগুলির সঙ্গে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন কমিটির যোগ করে দেওয়া থেকে বাড়ি বাড়ি যাঁরা সমীক্ষা করছেন, তাঁদের মণ্ডপও সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে সুডা। কিন্তু বর্ধমানে সেই সব কিছুই নজরে পড়ছে না। পুরসভার এক কর্তার যদিও দাবি, “সুডার সব নির্দেশই মানা হবে। নিয়মিত প্রচারও করা হচ্ছে।’’
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর এই সময় প্রায় ৭৫০ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হন জেলায়। এ বার আক্রান্ত ৫৫৬ জন। কালনা ১ ব্লকে ৮৩ জন, পূর্বস্থলী ১ ব্লকে ৭৯ জন ও পূর্বস্থলী ২ ব্লকে ৮২ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। জেলা পরিষদের কো-অর্ডিনেটর (ডেঙ্গি) তুহিন হাজরা বলেন, “পরিস্থিতি সন্তোষজনক হলেও পুজোর সময়ে ঢিলেঢালা মনোভাবের খেসারত যাতে দিতে না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদ প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকা, হাসপাতালে বিশেষ কর্মসূচি নিচ্ছে। কোথাও জল জমলে দ্রুত বার করতে হবে। মশা জন্মানোর সম্ভাব্য জায়গা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্ন স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া এলাকায় বেশি করে নজরদারি
চালাতে হবে।