ভাঙন: ভাগীরথীর গ্রাসে বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
ভাঙনের আশঙ্কা, ভোগান্তি বরাবরই ছিল। বর্ষায় ভাগীরথীর জল বাড়ায় তিন দিনে তলিয়ে গেল চারটি বাড়ি। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের তামাঘাটার বাসিন্দাদের দাবি, বিপদের আশঙ্কা প্রতিদিন বাড়ছে। বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয়ও নিয়েছে দশটি পরিবার।
দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ভাঙনের শিকার এই গ্রাম। একসময় হাজার চারেক ঘর থাকলেও এখন তা শ’খানেকে এসে ঠেকেছে। লাগাতার ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়, তাঁত সমবায়ের কার্যালয়, চাষের জমি-সহ অজস্র বাড়ি। বদলে দিয়েছে এলাকার অর্থনীতিও। এক সময়ের বড় জমির মালিকেরা অনেকেই এখন সংসার চালাতে তাঁত শ্রমিক অথবা খেতমজুরের কাজ করেন। বেশ কয়েকবার নদীর পাড় বাঁধানো হলেও তা কাজে আসেনি বলে গ্রামবাসীদের দাবি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শনিবার থেকে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। ওই দিন রাতে বাড়িতে ছিলেন না গ্রামের বাসিন্দা মহেশ্বর সরকার। তাঁর স্ত্রী শঙ্করীদেবী তিন মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলেন। তাঁর দাবি, ‘‘মাঝরাতে বিকট আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে এসে দেখি বাড়ির অর্ধেকটাই গিলে ফেলেছে নদী।’’ দ্রুত মেয়েদের নিয়ে বাড়ির বাইরে এসে প্রাণে বাঁচেন তাঁরা। আরও রাতে গোটা বাড়িটিই তলিয়ে যায় নদীগর্ভে। শঙ্করীদেবীর কথায়, ‘‘ভাগ্যিস সময়ে ঘুম ভেঙেছিল। না হলে বাঁচতাম না।’’ ওই রাতেই আরও তিনটি বাড়ির বেশ কিছুটা অংশ তলিয়ে যায় নদীতে। ভুবন সরকার, দীনবন্ধু সরকার, সনাতন মণ্ডল, রবীন্দ্রনাথ সরকারদের দাবি, নদী ‘ইউ’ আকৃতির বাঁক নিয়ে যেভাবে ভাঙতে শুরু করেছে তাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দ্রুত গোটা গ্রামই চলে যাবে নদী গর্ভে।
গ্রামের পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক প্রদীপ সাহা। তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুব উদ্বেগজনক। ভাগীরথীর পাড়ের সাড়ে তিনশো মিটার অংশ যাতে বাঁধানো হয় সে ব্যাপারে সেচমন্ত্রীকে চিঠি পাঠাচ্ছি।’’ কালনার মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘‘তামাঘাটা এলাকার ভাঙনের খবর জেনেছি। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে।’’