—প্রতীকী চিত্র।
গ্রাহকদের দাবি, ‘সিকিওরিটি ডিপোজিট’ দিয়েই তাঁরা বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু গত দু’মাসের বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে ফের ‘সিকিওরিটি ডিপোজিট’ চেয়েছে ডিপিএল (দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড)।— এমনটাই অভিযোগ দুর্গাপুরের গ্রাহকদের ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির।
ডিপিএলের দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৬৫০ মেগাওয়াট। গ্রাহক সংখ্যা, প্রায় ৬৩ হাজার। এর মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা সবই রয়েছে। কিন্তু, সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিল পেয়ে মাথায় হাত গ্রাহকদের। তাঁরা জানান, সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগ চালু রাখতে হলে ‘সিকিওরিটি ডিপোজিট’ নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিতে হবে গ্রাহকদের।
কী রকম সেই টাকার পরিমাণ? স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের বিদ্যুৎ বিলে বীরভানপুরের সুভাষ আকুড়েকে ১৯৩৪ টাকা, বিধাননগর সেক্টর ২ সি-র বাসিন্দা মোহনকুমার ঘোষকে ৬৩১২ টাকা, বিধাননগরের সার্কুলার অ্যাভিনিউয়ের নয়নরঞ্জন ঘোষকে ৭৫৬৩ টাকা ‘সিকিওরিটি ডিপোজিট’ হিসেবে জমা দিতে বলা হয়েছে। একটি তেলঘানির মালিক মামড়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি প্রমোদ অগ্রবাল জানিয়েছেন, তেলঘানির জন্য ৪৪ হাজার টাকা ও বাড়ির জন্য প্রায় পাঁচ হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। অথচ, প্রায় চার দশক আগে একটি বাণিজ্যিক ও একটি গৃহস্থালীর বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে ‘সিকিওরিটি ডিপোজিট’ বাবদ ১ হাজার ও ৫০০ টাকা জমা দিয়েছিলেন বলে দাবি তাঁর। এখন ফের সিকিওরিটি ডিপোজিট জমা দিতে বলা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর।
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে নানা রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলি। ইতিমধ্যেই সিপিএমের ১৩টি গণসংগঠন সম্প্রতি দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। ডিপিএল কর্তৃপক্ষকেও স্মারকলিপির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে।
সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায়সরকার বলেন, ‘‘গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে ডিপিএলকে। প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট পরিমাণ সিকিওরিটি ডিপোজিট জমা দিয়েই সংযোগ নিয়েছিলেন। এখন আগাম কোনও রকম নোটিস ছাড়াই এ ভাবে হাজার হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া কোনও অবস্থাতেই মেনে নেওয়া হবে না।’’ ডিপিএলের আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাসেরও ক্ষোভ, ‘‘নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন নিয়মে সিকিওরিটি ডিপোজিট জমা নিয়েই বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে থাকে সংস্থা। কিন্তু পুরনো গ্রাহকদের কাছ থেকে নতুন নিয়মে ‘সিকিওরিটি ডিপোজিট’-এর টাকা চাওয়াটা বেআইনি। একতরফা ভাবে ডিপিএল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
যদিও বিষয়টি নিয়ে চাপানউতোর শুরু হওয়ার পরে ডিপিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সাধারণত একজন গ্রাহকের গড়ে তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল ‘সিকিওরিটি ডিপোজিট’ হিসেবে জমা রাখা হয়। অতীতে বিদ্যুতের দাম কম ছিল। গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের হারও কম ছিল। বর্তমানে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল আগের তুলনায় কয়েকগুণ করে বেড়ে গিয়েছে। তাই নতুন করে সিকিওরিটি ডিপোজিট চাওয়া হয়েছে। তা ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী, ওই টাকা সংযোগ ছিন্ন করার সময়ে গ্রাহকদের ফেরতও দিয়ে দেওয়া হবে।