গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ট্যাব কেলেঙ্কারির ঘটনায় মালদহ এবং উত্তর দিনাজপুর থেকে চার জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল বর্ধমান জেলা পুলিশ। মঙ্গলবারই ওই চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ করে রাজ্য সরকারের দেওয়া ট্যাব কেনার টাকা হাতিয়েছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার মালদহ থেকে এক জন এবং উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ও ইসলামপুর থানা থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহে ধৃত ব্যক্তির নাম হাসেম আলি। তিনি মালদহের বৈষ্ণবনগরের বাসিন্দা। ওই যুবক স্থানীয় একটি সাইবার ক্যাফের মালিক। এ ছাড়াও উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থেকে ধরা পড়েছেন আশারুল হোসেন। তিনি রামগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। অপর দুই ধৃতের নাম সাদ্দিক হোসেন ও মোবারক হোসেন। তাঁরা দু’জনেই চোপড়া থানার দাসপাড়া এলাকার বাসিন্দা। পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ করে তাঁরাই ট্যাব কেনার টাকা হাতিয়েছেন বলে অভিযোগ।
তবে পুলিশের অনুমান, ধৃত যুবকেরা ছাড়াও এই চক্রে আরও কয়েক জন জড়িত থাকতে পারেন। তাঁদের খুঁজতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তল্লাশি। ধৃতদের সকলেরই বয়স ২১ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার সায়ক দাস জানিয়েছেন, তদন্তে নেমে জানা যায়, জুলাই মাসে হাসেম মোবাইলে বাংলার শিক্ষা পোর্টালে ঢোকেন। এর পর একটি অ্যাকাউন্টে ঢুকে তথ্যও বদলে দেন তিনি। যে মোবাইলটি হাসেম ব্যবহার করতেন সেটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বাকি যে তিন জন ধরা পড়েছেন, তাঁরা পেশায় শ্রমিক। পাশাপাশি সাইবার ক্যাফেতেও কাজ করতেন তাঁরা। ধৃতদের সাত দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে মঙ্গলবারই আদালতে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দিন কয়েক ধরেই পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য টাকা অন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকার ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যে। ‘তরুণের স্বপ্ন’ নামে ওই প্রকল্পে ট্যাব কেনার জন্য পড়ুয়াদের রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। অথচ অভিযোগ, চলতি বছরে সেই টাকা অনেক পড়ুয়াই পায়নি। অনেকে আবার দ্বিগুণ টাকা পেয়েছে! পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার টাকা কী ভাবে, কার গাফিলতিতে অন্যের অ্যাকাউন্টে গেল, তার তদন্তে নেমে শিক্ষা দফতর জানতে পারে, রাজ্য জুড়ে ৩০০-রও বেশি পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে। এর পর বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে জেলা পরিদর্শকদের কাছ থেকে রিপোর্টও সংগ্রহ করে স্কুল শিক্ষা দফতর।
শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের ৮৮ জন, পূর্ব মেদিনীপুরের ৬৫ জন এবং মালদহের ১৪৯ জন পড়ুয়া ট্যাবের টাকা পাননি। ওই টাকা ঢুকেছে অন্য অ্যাকাউন্টে! শনিবার এ প্রসঙ্গে শিক্ষাসচিব বিনোদ কুমার বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। এর নেপথ্যে যদি কেউ জড়িত থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ সোমবার বিকেলে এ বিষয়ে নবান্নে বৈঠকও করেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। এর পরেই মালদহ থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।