ক্লান্তিহীন: মহারানি কোঙার। নিজস্ব চিত্র
গায়ে লাল টি-শার্ট, মাথায় লাল টুপি, হাতে লাল পতাকা। স্নিকার্স নয়, পায়ে চটি। তিনি হাঁটছেন, কখনও আদিবাসী নৃত্যেও পা মেলাচ্ছেন। কে বলবে, তার আগের রাতে দুর্গাপুরে দলের কর্মসূচিতে ছিলেন। সকালে বাড়ি ফিরেই পথে নেমেছেন। তবু ক্লান্তির ছাপ নেই চোখে-মুখে। তাঁর কথায়, “হাঁটার মাধ্যমে যোগাযোগ বাড়ে। মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা যায়। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত আমি দলের কর্মসূচিতে যোগ দেব। দিন বদলের স্বপ্ন দেখি। যা আমাদের পাড়তেই হবে।”
রাজ্য জুড়ে নানা অভাব-অভিযোগের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে সিপিএম। সেই কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে বর্ধমান থেকে মেমারির দেবীপুর পর্যন্ত পদযাত্রা হয়। তাতে দলের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উদয় সরকার, আভাষ রায়চৌধুরীদের সঙ্গে ছিলেন মেমারির প্রাক্তন বিধায়ক, ৮৪ বছরের মহারানি কোঙার। আরও পরিচয়, তিনি বিনয় কোঙারের স্ত্রী, হরেকৃষ্ণ কোঙারের ভ্রাতৃবধূ। মহারানিদেবীর সঙ্গে পা মিলিয়েছিলেন তাঁর দুই ছেলে ও দুই পুত্রবধূ। ছেলে-বৌমারাও সিপিএমের বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্বে রয়েছেন।
কোঙার পরিবারের খাসতালুক মেমারিতে ২০১০ সালের পুরভোটে নাস্তানবুদ হয় সিপিএম। ১৬টি আসনের একটিতেও জিততে পারেনি তারা। বিনয়-মহারানির ছোট ছেলে অভিজিৎ কোঙারও হেরে যান। সেই থেকে মেমারি তৃণমূলেরই হাতে। কিন্তু এখনও মহারানিদেবী রাস্তায় বেরোলে তাঁর খোঁজ নেন বাসিন্দারা। তাঁদের অনেকের কথায়, “ওঁদের প্রতি আমাদের একটা আবেগ কাজ করে।”
এই পদযাত্রায় প্রথমে পালশিট থেকে মেমারি অবধি হাঁটেন মহারানিদেবী। পরের দিন মেমারি থেকে দেবীপুরেও পদযাত্রায় হাঁটতে দেখা যায় তাঁকে। তাঁর বড় ছেলে সুকান্তবাবু বলেন, “সব মিলিয়ে মা ৭-৮ কিলোমিটার হেঁটেছেন।” এই বয়সে এত ধকল নিতে পারেন কী ভাবে? মহারানিদেবী বলেন, “আমি রাস্তায় নামলে অনেকে উৎসাহিত হন। দলের ছেলেরা অনেক সময় নিষেধ করেন। কিন্তু মন মানে না। নিজের উৎসাহেই রাস্তায় নামি, দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে যাই।”
সে জন্যই এখনও তিনি কোনও দিন দুর্গাপুর, কোনও দিন বর্ধমান, আবার কখনও কলকাতায় ছোটেন। মাসে ১০-১২ দিন রাত কাটান দলের দফতরে। তাঁর কথায়, “সিপিএম এখনও মরেনি। আমরা এখনও জীবন্ত। সমাজে শোষিত মানুষ বাড়ছে। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” ৩৪ বছর সরকারে থাকাকালীন বামফ্রন্টের বিরুদ্ধেও তো শোষণের নানা অভিযোগ উঠেছিল? তাঁর জবাব, “হাতের পাঁচটা আঙুল সমান নয়। কিছু পরিবর্তন তো হয়েছিলই।”
সিপিএমের এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘ঋতব্রত-কাণ্ডে সম্প্রতি মুখ পুড়েছে দলের। সেখানে মহারানিদেবীকে দেখে দলে নতুনেরা উৎসাহিত হয়ে মাঠে নামলে চিন্তা থাকত না!’’