সুপর্ব প্রতিহার। নিজস্ব চিত্র।
মঙ্গলবার ফল প্রকাশিত হবে মাধ্যমিকের। এখনও পর্যন্ত জীবনে যে যে পরীক্ষার ফল হাতে পেয়েছি, তাতে এমনটা আর কোনও দিন হয়নি। পরীক্ষাই দিইনি, অথচ তার ফল প্রকাশিত হবে। আর পাঁচ জনের মতো এটা আমার জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা হবে মনে করেছিলাম। তাই পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনটা আমার কল্পনায় অন্য রকম ছিল।
মনে করেছিলাম, অন্যান্য বছর অন্যদের সঙ্গে যেমনটা হয়, তেমনটা এ বারও হবে। স্কুল থেকে আমার মাধ্যমিকের ফলের খবর আসবে। ভাল খবর হলে, বাড়িতে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা আসবেন। মিষ্টিমুখ হবে। যেমনটা অন্যান্য বার দেখেছি। কিন্তু এই বছরটা অন্য রকম। এ সব পরিচিত ছবি এ বার দেখা যাবে না। কারণ এ বার পরিস্থিতিটাই অন্য রকম। প্রথমত, মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়নি। দ্বিতীয়ত, অন্যান্য বারের মতো মেধাতালিকাও এ বার প্রকাশিত হবে না।
আমি জানি, এই পরীক্ষায় ভাল স্থান পেলে জীবনের চলার পথ সুগম হবে। তাই শুরু থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমার বরাবর সব বিষয়ে প্রাইভেট টিউটর ছিল। তা ছাড়া স্কুলও সেরা ১০ জন ছাত্রকে নিয়ে প্রস্তুতির ব্যবস্থা করেছিল প্রতি বারের মতো। কিন্তু জোরালো ধাক্কা দিয়ে গেল করোনা। তার জেরে পরীক্ষাই হল না। জানি না, কাল কী ফল দেখব। তবে এটা বলতে পারি, ভাল ছাত্রছাত্রীরা কখনই গড় ফলে খুশি হবে না। এ বার স্কুলে পড়াশুনো এবং পরীক্ষা কিছুই হয়নি। নবম শ্রেণীর ফলই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। নিজে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারলাম না, তাই একটা খারাপ লাগা রয়েছে।
আমি নিজের দিক থেকে এ সব ভাবছি বটে। তবে এর উল্টো দিকও আছে। গ্রাম বাংলার বহু পড়ুয়ার কাছেই স্কুল একটা বড় ভরসার জায়গা। কারণ তাদের অনেকেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। পড়াশোনার জন্য স্কুলই তাদের কাছে একমাত্র অবলম্বন। সব বিষয়ে টিউটর পাওয়া তাদের কাছে দিবাস্বপ্ন। অনেকের ঘরেই স্মার্টফোন নেই। তাদের কাছে অনলাইনে পড়াশোনা করা একটা চ্যালেঞ্জ। তাই তাদের প্রস্তুতিও অসম্পূর্ণ। তারাও দ্বিধায়। এর পর কী হবে সে প্রশ্নের উত্তর কারও কাছে নেই। তাই ফল ঘোষণার আগের দিন খুশিতে নেই কেউ। করোনা সকলের খুশি কেড়ে নিয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি আমি ছোটবেলা থেকে গান শিখেছি। পড়াশোনার ফাঁকে তার চর্চাও করি। এই বিষণ্ণ সময়ে গানই এখন সঙ্গী আমার।