যাত্রা শুরু: ইভিএম-সহ ভোটের নানা খুঁটিনাটি জিনিস নিয়ে বুথের পথে ভোটকর্মীরা, রবিবার দুপুরে কাটোয়ায়। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
ভোটের আগের দিন ভোটারদের হুমকি, বহিরাগতদের এলাকায় ঢোকানোর মতো একাধিক অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের কাছে বিজেপি ও সিপিএম অভিযোগ জানিয়েছে। অভিযোগ জমা পড়েছে ই-মেলে, পুলিশের কাছেও। জেলাশাসক বলেন, “যে রকম অভিযোগ আসছে, সে রকমই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
জেলার একমাত্র বিধানসভা খণ্ডঘোষে আজ, সোমবার ভোট হচ্ছে না। প্রশাসনের দাবি, ওই এলাকা ছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকা ‘সিল’ করা হয়েছে। জেলার ৩৫টি জায়গায় নাকা-চেকিং চলছে। তার পরেও সিপিএম ও বিজেপি এক সুরে অভিযোগ তুলেছে জেলার নানা প্রান্তে। সিপিএমের অভিযোগ, মন্তেশ্বর, গলসি, রায়না, বর্ধমান শহর-সহ বিভিন্ন বিধানসভায় বিএলওদের বদলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুথ-স্লিপ দিয়েছেন অন্য কেউ। বর্ধমান শহরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ছাড়াও রায়নার হিজলনা, গলসির রামগোপালপুর, মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম, বর্ধমান উত্তরের কুরমুন-সহ বিভিন্ন জায়গায় মোটরবাইক বাহিনী ভোটারদের ভয় দেখিয়ে প্রভাবিত করছে বলেও অভিযোগ। রবিবার দুপুরে ভাতারের বালসিডাঙা গ্রামের একদল আদিবাসী মহিলা এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, শনিবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের একটি দল তাঁদের পাড়ায় গিয়ে ভোট দেওয়ার ‘চাপ’ দেয়। তৃণমূলের লোকেদের কাছে রাস্তা ও পর্যাপ্ত পানীয় জলের দাবি জানালে তাঁদের হুমকির মুখে পড়তে হয় বলেও অভিযোগ। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য বিপ্লব সামন্ত। তাঁর দাবি, “সবাই তো তৃণমূল। খামোকা হুমকি দিতে যাব কেন?”
বিজেপির এক কর্মীর বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে বর্ধমান শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনন্ত পাল ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। শান্তনু রায় ও সুব্রত রায় নামে বিজেপির দুই কর্মী বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, শনিবার দুপুরে টানা দেড় ঘন্টা ধরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। পরিবারের লোকজনকেও মারধর করা হয়েছে। ওই রাতে পাঞ্জাবি পাড়ায় একটি গুমটি ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। ওই গুমটির মালিক বাবু কুমার সাউ ‘সি-ভিজিল’ অ্যাপে অভিযোগ জানিয়েছেন। সিপিএমের দাবি, রায়নার চকচন্দন গ্রামে ভোটারদের ভয় দেখাতে গেলে তৃণমূল প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। ওই এলাকার এক তৃণমূল নেতা মাধবডিহি থানায় তৃণমূল মারধর করেছে বলে অভিযোগ জানিয়েছে।
শনিবার কাটোয়ার মেরা, মোস্তাপুরে সিপিএম কর্মীদের মারধর করারও অভিযোগ উঠেছে। করজগ্রাম, পাঁজোয়াতে দলের পোস্টারও ছেঁড়া হয়েছে বলে দাবি বর্ধমান পূর্ব সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাসের। তিনি বলেন, ‘‘কাটোয়ায় চাপা সন্ত্রাস চলছেই। প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে ভোট নিরাপদে হবে।’’ মঙ্গলকোটের শিমুলিয়ার ১১০ ও ১১২ নম্বর বুথে স্থানীয় বাসিন্দাদের যেতে তৃণমূল ভয় দেখাচ্ছে বলে দাবি স্থানীয় বিজেপি নেতা বুদ্ধদেব মণ্ডলের। তাঁর দাবি, মাজিগ্রাম পঞ্চায়েতের ইছাপুরের কিছু বাসিন্দাকে বনপাড়া হাইস্কুলের বুথে ভোট দিতে যেতে হয়। তাঁদের ভয় দেখানো হচ্ছে। মঙ্গলকোট অঞ্চলের কামালপুরের ২২টি পরিবারকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর দাবি, ‘‘সংগঠন দুর্বল হওয়ায় এ সব মিথ্যা দাবি তুলছে ওরা। এখানে নির্বিঘ্নে ভোট হবে।’’
বিজেপি প্রার্থী পরেশচন্দ্র দাসের দাবি, কালনা ২ ব্লকের একটি পঞ্চায়েত এলাকায় দলীয় কর্মীদের শাসানো শুরু করেছে তৃণমূলের লোকেরা। কালনা ১ ব্লকের বেগপুর এলাকার তৃণমূল নেতা ইনসান মল্লিক মোটরবাইক মিছিল করে ঘুরে এলাকায় সন্ত্রাস করছে বলেও তাঁর দাবি। পর্যবেক্ষক ও প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে বিজেপির তরফে। যদিও ওই তৃণমূল নেতার দাবি, তিনি বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হননি। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য গোলাম জার্জিসের অভিযোগ, মন্তেশ্বর এলাকাতেও শাসক দলের লোকজনেরা ভয় দেখাচ্ছে। যদিও সন্ত্রাস করে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভোট আটকানো যাবে না বলেও তাঁর দাবি।
রবিবার সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উদয় সরকার বলেন, “জেলাশাসকের কাছে বিস্তারিত ব্যাখা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়েছে।’’ বিজেপির নেতা সন্দীপ নন্দীও বলেন, “বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে তৃণমূল ত্রাস সৃষ্টি করছে। নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের দাবি, “বিরোধীরা হারার আতঙ্কে ভুগছে।’’