প্রতীকী ছবি।
পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে গত বছর দুয়েকে। নিত্য বোমাবাজি, সংঘর্ষের সেই ছবি এখন আর সে ভাবে দেখা যায় না। ২০১১ সালের পর থেকে এলাকায় বিরোধীদের নড়াচড়া কমেছিল ক্রমশ। কিন্তু এখন ফের কিছু-কিছু জায়গায় দেখা মিলছে লাল পতাকার, দেওয়ালে কাস্তে-হাতুড়ি বা পদ্ম। তবে তার পরেও এ বার কেতুগ্রামে ‘লিড’ বাড়বে তাঁদের, আত্মবিশ্বাসী তৃণমূলের নেতারা।
এক সময়ে সিপিএমের ঘাঁটি কেতুগ্রামে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল। দেড় হাজারের বেশি ভোটে জেতেন তৃণমূলের শেখ সাহানেওয়াজ। তার পরে কেতুগ্রাম ১ ব্লকের নানা এলাকায় সিপিএমের বেশ কিছু অফিসে তালা পড়ে যায়। অভিযোগ, তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে বিরোধীরা কার্যত এলাকাছাড়া হয়ে পড়ে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের ভোটের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৩ হাজার। দু’বছর পরে বিধানসভা ভোটে ফের সাহানেওয়াজ জয়ী হন। তবে এ বার ব্যবধান দাঁড়ায় প্রায় ন’হাজার।
গত লোকসভা ও বিধানসভা, দু’টি ভোটেই তৃণমূলের জয় এসেছে কেতুগ্রাম ১ ব্লকের ভোটের জোরে। কেতুগ্রাম ২ ব্লকে দু’টি ভোটেই এগিয়ে থেকেছে বামেরা। তবে এরই মধ্যে সেখানে বামেদের দখলে থাকা পঞ্চায়েতগুলি একে-একে অনাস্থা এনে দখল করেছে তৃণমূল। এলাকায় দাপট যেমন বেড়েছে, সেই সঙ্গে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বও তীব্র হয়েছে এই অঞ্চলে। ২০১৭ সালের এপ্রিলে খুন হন কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহের শেখ। নাম জড়ায় দলেরই বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
স্থানীয় নানা সূত্রের দাবি, জাহের খুন হওয়ার পরে এলাকার চিত্র পাল্টাতে শুরু করে। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘জাহেরের ভয়ে বিরোধীরা এক সময়ে ব্লকে ঢুকতে পারত না। সেটা আলগা হতেই এলাকায় ছোট-ছোট কর্মসূচি নিয়ে সংগঠন চাঙ্গা করতে শুরু করে সিপিএম।’’ অনেক নেতা-কর্মী দলের কোন্দলের জেরে মামলা-মোকদ্দমায় নাম জড়িয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন বলেও ওই নেতার দাবি। তৃণমূলের পুরনো নেতা-কর্মীদের অনেকে আবার দাবি করেন, দলের কর্মসূচিতে এখন আর ডাক পান না তাঁরা।
বিরোধীদের দাবি, শাসকদলের এই কলহের ফসল এ বার ঘরে তুলবে তারা। সিপিএম সূত্রের দাবি, যে কেতুগ্রাম ১ ব্লকে এক সময়ে তাদের পক্ষে পা রাখাই মুশকিল হত, সেখানে এ বার ১৪৬টি বুথের মধ্যে ৩০টিতে দেওয়াল লেখা গিয়েছে। কেতুগ্রাম ২ ব্লকের ১১৯টি বুথের প্রায় শ’খানেকে দেওয়াল লিখন হয়েছে। এ ছাড়া এই কেন্দ্রের অন্তর্গত কাটোয়ার শ্রীখণ্ড ও কোশিগ্রামে দলের প্রভাব রয়েছে বলে সিপিএম নেতাদের দাবি। দলের জেলা কমিটির সদস্য তমাল মাজি দাবি করেন, ‘‘কেতুগ্রাম ২ ব্লকে আমাদের সংগঠন ভাল অবস্থায় রয়েছে। গত বিধানসভা ভোটে ১ ব্লকে ৭০টি বুথে তৃণমূল রিগিং না করলে আমরাই জিততাম।’’
মাথা তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি-ও। ২০১৪-র ভোটে কেতুগ্রামে প্রায় ১৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তারা। ২০১৬-র ভোটে তা প্রায় ৫ শতাংশ কমে গেলেও এ বার ভোট অনেক বাড়বে বলে দাবি করেন দলের কেতুগ্রামের নেতা চাঁদকুমার সাহা। তিনি দাবি করেন, বিধানসভা এলাকার মোট ২৯২টি বুথের মধ্যে শ’দুয়েক বুথে কমিটি গড়া হয়েছে। কেতুগ্রাম ১ ব্লকের গোটা কুড়ি ও ২ ব্লকের প্রায় ৭৫টি বুথে দেওয়াল লেখাও হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কেতুগ্রাম ১ ব্লকের কিছু জায়গায় সন্ত্রাস আছে। ১৬ এপ্রিল আমাদের প্রার্থী দুই ব্লকেই প্রচার করবেন।’’
তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ অবশ্য দাবি করেন, কেতুগ্রাম ১ ও ২ ব্লক মিলিয়ে তাঁরা এ বার ৫০ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকবেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উড়িয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সব নেতাদের মর্যাদা ও পদ দিয়েছি। এখানে দলে কোনও সমস্যা নেই।’’
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভাগীরথীর ভাঙন এখানে মূল সমস্যা। ভাঙন রোধে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প প্রয়োজন বলে দাবি তাঁদের। সেই সঙ্গে চাষে সেচের সমস্যা মেটাতে বন্ধ হওয়া সাবমার্সিবলগুলি চালুর দাবিও রয়েছে। বন্ধ হওয়ার পথে কান্দরা ও গঙ্গাটিকুরির কিসানমান্ডি। বালি বোঝাই ট্রাক চলাচলের জন্য রাস্তা খারাপ হওয়া নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে।
ভোটে যে পক্ষই জিতুক, এ সব সমস্যার কতটা হাল হবে, সংশয় রয়েছে বাসিন্দাদের মনে।