তৃণমূলের দলীয় দফতরে প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় নেতা-মন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র
ভোট গণনা শুরু হতে এখনও ৪৮ ঘণ্টা। সপ্তম দফা ভোট শেষ হতেই অবশ্য বিভিন্ন সমীক্ষার ফল বেরিয়েছে। ইঙ্গিত মিলেছে, এ বঙ্গেও বিজেপির রথ ছুটবে। তাতে অবশ্য কান দিতে রাজি নন শাসকদলের নেতাকর্মীরা। তাঁদের পাল্টা দাবি, সমীক্ষা ভুল প্রমাণ করে এ বঙ্গেই চাকা বসে যাবে রথের।
বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া সোমবারই দিল্লি থেকে বর্ধমানে এসেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘এবিপি-নিয়েলসন আমাকে হারিয়ে দিল! এটা কখনও হতে পারে? আমি নিশ্চিত জিতব। শুধু মন্তেশ্বর থেকেই ২৫ হাজার ভোটে জয় পাব।’’ বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের প্রার্থী সুনীল মণ্ডলের দাবি, ‘‘ওই সমীক্ষা আমাকে জোর করে হারিয়েছে। জনগণের ভোটে আমাকে কেউ হারাতে পারবে না।’’
এ দিন ভরদুপুরেও বিজেপির জেলা সদর দফতর, বর্ধমানের ঘোরদৌড় চটিতে ভিড় করেছিলেন উৎসাহীরা। ঘন ঘন ফোনেও সমীক্ষার ব্যাপারে নানা প্রশ্ন আসছে। সব সামাল দেওয়ার ফাঁকে দলের সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দী বলেন, “সমীক্ষার ফলকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না। ওই সব সমীক্ষার সর্বোচ্চ ফলের চেয়েও আমাদের আসন অনেক বেশি হবে।’’
শহরের ভিতর কালীবাজারে জেলার দলীয় কার্যালয়ে বিধায়ক, নেতা, প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও। সেখানে গণনার দিন সবস্তরের এজেন্টদের সময় মতো কেন্দ্রে পৌঁছনো, গণনাকেন্দ্রের বাইরে বুথ ক্যাম্প তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়। স্বাভাবিক ভাবে আসে সমীক্ষার প্রসঙ্গও। স্বপনবাবু দলীয় নেতা-কর্মীদের সাফ বলেন, “ওই সব সমীক্ষা নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যাথা নেই। আমরা বর্ধমানের দুটি আসনেই ভাল ব্যবধানে জিতব।’’
এবিপি নিউজ-এসি নিয়েলসনের সমীক্ষায় বর্ধমান-দুর্গাপুর তৃণমূলের হাতে থাকলেও বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে সম্ভাব্য জয়ী বিজেপি। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রার্থী পরেশচন্দ্র দাসকে অভিনন্দনও জানাতে দেখা গিয়েছে অনেককে। প্রকাশ্যে মানতে না চাইলেও সমীক্ষাকে একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজেপি, সিপিএম, তৃণমূলের একাংশ। ওই তিনটি দলের নেতা-কর্মীদের দাবি, কাটোয়া, পূর্বস্থলী উত্তর ও জামালপুরে এগিয়ে থাকতে পারে বিজেপি। আবার পূর্বস্থলী দক্ষিণ, রায়না ও কালনায় তৃণমূল জিতলেও ভোটের ব্যবধান কমতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। এই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা বিজেপি নেতা কৃষ্ণ ঘোষের কথায়, “আমাদের আশার চেয়েও ভাল ফল অপেক্ষা করে রয়েছে।’’ দলের আহ্বায়ক ধনঞ্জয় হালদারও বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতাদের অনেক অঙ্কই কাজ করবে না। গোটা কেন্দ্র জুড়ে চোরাস্রোত রয়েছে আমাদের পক্ষে। মণ্ডল কমিটিগুলি থেকে যে রিপোর্ট এসেছে তাতে জয় নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
যদিও জেলা দফতরে সভাপতি স্বপনবাবুর পাশে বসে প্রার্থী সুনীলবাবুর দাবি, “আমিই রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে জিতব।’’ সিপিএমের প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাসের আবার দাবি, “আমি নিশ্চিত সমীক্ষা মিলবে না। কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারের নীতিতে তপ্ত হাওয়ায় বসে রয়েছে জনগণ। সেখান থেকে ঠান্ডা হাওয়া পাওয়ার জন্যে মানুষ এ বার আমাদেরই ভোট দেবেন।’’
সিপিএমের জেলা সদর দফতর পার্কাস রোডের বাড়িতে বসে সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, “এই সব সমীক্ষার না কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে, না কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে।’’ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া একটি হোটেলে বসে বর্ধমান-দুর্গাপুরের কংগ্রেস প্রার্থী রণজিৎ মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “এই সব সমীক্ষাকে বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। কংগ্রেস চমকপ্রদ ফল করবে।’’
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে রয়েছেন বিভিন্ন দলের কর্মী-সমর্থক, আমজনতাও। চলবে হিসেব-নিকেশ। তবে জণগণ আস্থা রেখেছেন কাদের উপরে, তা বোঝা যাবে বৃহস্পতিবারই।