টানা বিদ্যুৎ বিভ্রাটে গরমের মধ্যে রীতিমতো নাজেহাল হলেন দুর্গাপুরের একাংশের বাসিন্দারা। বুধবার বিকেল থেকে ঘণ্টা চারেক বিদ্যুৎহীন ছিল শহরের একটি বড় অংশ। তার জেরে উৎপাদন ব্যাহত হয় শ’খানেক কারখানাতেও। পাওয়ার প্ল্যান্টের স্যুইচ ইয়ার্ডে কারেন্ট ট্রান্সফর্মারে বিস্ফোরণের জেরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এই বিভ্রাট বলে দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল) সূত্রে জানা গিয়েছে।
মূলত দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের কল-কারখানাগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ১৯৬০ সালে ডিপিএল গড়া হয়। শিল্পাঞ্চলের পাশাপাশি শহরের সিটি সেন্টার, বিধাননগরের মতো অভিজাত এলাকা এবং সেপকো, সগড়ভাঙা, দুর্গাপুর বাজার, দুর্গাপুর স্টেশন, এমএএমসি টাউনশিপ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে ডিপিএল। এমনকী, বেনাচিতি এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও ডিপিএলের উপরে নির্ভরশীল। ওই এলাকায় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ডিপিএল। এ দিন বিকাল ৩টের কিছু আগে হঠাৎ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। গরমে কাহিল হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। বিশেষত প্রবীণ, শিশু ও রোগীরা বেশি সমস্যায় পড়েন। সন্ধ্যা নামতেই অন্ধকারে ডুবে যায় শহর।
বিদ্যুৎ না থাকায় বামুনাড়া শিল্পাঞ্চল, ইপিআইপি, আরআইপি, রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর, লেনিন সরণি শিল্পতালুক ইত্যাদি এলাকায় মোট প্রায় শ’খানেক কারখানা উৎপাদনহীন হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ না থাকায় দুর্গাপুর স্টেশনের কাজকর্মও ব্যাহত হয়। বিঘ্নিত হয় ব্যাঙ্ক, অফিস-কাছারির কাজ। বিপাকে পড়েন সিটি সেন্টার, বেনাচিতির একাধিক শপিংমল কর্তৃপক্ষও। বিদ্যুৎ না থাকায় অঙ্গদপুর এবং এইচএফসিএলের সংশোধনাগারে জল পরিশোধনও বন্ধ ছিল। বিপাকে পড়েন মহকুমা হাসপাতাল, ইএসআই হাসপাতাল, বিধাননগরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেনারেটর চালিয়ে কোনও রকমে পরিষেবা চালু রাখা হয়। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ এক বার বিদ্যুৎ এলেও তা বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি। শেষে রাত ৮টা নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন বাসিন্দারা।
কেন এতক্ষণ বিদ্যুৎহীন রইল শিল্পশহর? ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকাল ৩টের খানিক আগে পাওয়ার প্ল্যান্টের স্যুইচ ইয়ার্ডে কারেন্ট ট্রান্সফর্মারে বিস্ফোরণ হয়। ফলে ওই ইয়ার্ডে আগুন ধরে যায়। পুড়ে যায় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বহু গুরুত্বপূর্ণ কেব্ল। আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের ঝোপঝাড়েও। দ্রুত সংস্থার দমকল আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মেরামতি শুরু করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ তাঁরা সমস্যা মিটেছে বলে নিশ্চিত হন। এর পরেই সংস্থার ৬টি সাব স্টেশন মারফত ধাপে ধাপে শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করে। কাল-কারখানাতেও ধীরে ধীরে উৎপাদন শুরু হয়। সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ঠিক কী কারণে এ দিন বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছিল, তা খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’