বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ কী ভাবে হবে, তা নিয়ে বুধবার আসানসোলে আয়োজিত হয় পশ্চিম বর্ধমানের উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রথম প্রসাসনিক বৈঠক। কিন্তু সেই বৈঠকে বিরোধী দলের বিধায়কদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ সিপিএমের। আরও অভিযোগ, উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পে বেছে বেছে বিরোধী বিধায়ক থাকা এলাকাগুলিকে বঞ্চনা করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য জেলার সমস্ত বিধায়ক নিজের নিজের এলাকার ১২৫ জন করে উপভোক্তার নাম ‘সুপারিশ’ করে পঞ্চায়েত সমিতির কাছে জমা দেবেন। এ ছাড়া জেলা পরিষদের সদস্যরা ২৫ জন করে উপভোক্তার নামের তালিকা দেবেন। বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি বিডিও-দের দ্রুত একশো দিনের বকেয়া থাকার তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর পরেই তিনি ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পের বিষয়টি উল্লেখ করেন বলে জানা গিয়েছে।
প্রশাসনের এক কর্তা জানান, সেই সময় জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘পশ্চিম বর্ধমানের অন্ডাল, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া ও কাঁকসা ব্লকের জন্য উপভোক্তার নাম বিধায়কদের কাছ থেকে নেওয়ার দরকার নেই। বিষয়টা পঞ্চায়েত সমিতি দেখে নেবে।’’ সেই মতো সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় বৈঠকে।
এই সিদ্ধান্তের খবর প্রকাশ্যে সরব হয় বিরোধীরা। শুক্রবার সিপিএমের তরফে অভিযোগ করা হয়, রানিগঞ্জ ও অন্ডাল ব্লকের একাংশ রানিগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত। ওই কেন্দ্রের বিধায়ক সিপিএমের রুনু দত্ত। জামুড়িয়া ব্লক জামুড়িয়া বিধানসভাকেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। সেখানে বিধায়ক সিপিএমের জাহানারা খান। কাঁকসার একটি বড় অংশ আবার দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের মধ্যে। সেখানেও বিধায়ক সিপিএমের সন্তোষ দেবরায়। এই কারণে বেছে বেছে অন্ডাল, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ ও কাঁকসাকে প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য পঙ্কজ রায়সরকার বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পে বাড়ি দেওয়া নিয়েও যে ভাবে রাজনীতি হল, তা মানা যায় না।’’ তাঁর অভিযোগ, বেছে বেছে শাসক দলের লোক জনকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, ‘‘আমাদের বিধায়করা উপভোক্তাদের তালিকা নিয়ে বিডিও-র কাছে যাবেন। গ্রহণ না করা হলে উপভোক্তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন হবে।’’
অভিযোগ অস্বীকার করে দেবুবাবুর দাবি, ‘‘জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া নামের তালিকা চূড়ান্ত করবে পঞ্চায়েত সমিতি। বিধায়করা নাম দিলেই তা চূড়ান্ত তালিকায় থাকবে, এমনটা না-ও হতে পারে!’’ জেলা পরিষদের এক সদস্যের অবশ্য দাবি, এই মুহূর্তে সব পঞ্চায়েত সমিতিই শাসক দলের হাতে। বিরোধী বিধায়কদের তালিকা পছন্দমতো না হলে পঞ্চায়েত সমিতি বাদ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদিও তা স্বীকার করেননি দেবুবাবু।