বর্ধমানে জেলা সম্মেলন

আন্দোলনের মতো আবহ, মত সিপিএমে

সাবেক বর্ধমান জেলা ভাগের পরে সিপিএমেরও সাংগঠনিক ভাগ হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানে প্রথম সম্মেলন শুরু হয়েছে শুক্রবার দুপুরে। সিপিএম সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান শহরে ২৬ বছর পরে জেলা সম্মেলন হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৬
Share:

বছর দেড়েক আগে জেলার ১৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে হার হয়েছে ১৪টিতেই। তবু এখন শাসকদলের সঙ্গে লড়াই করার মতো যে ‘মশলা’ এখন তাঁদের হাতে রয়েছে তা আগে ছিল না, জেলা সম্মেলনের বৈঠকে দাবি করলেন সিপিএমের প্রতিনিধিরা। এই ‘অনুকূল’ পরিস্থিতি কাজে লাগানোর জন্য মাঠে-ময়দানে কী ভাবে নামা যায়, সে নিয়েই আলোচনা হল শনিবার। কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা, কর্মী-সমর্থকদের বিজেপিতে যাওয়া আটকাতে নেতৃত্বের দুর্বলতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

সাবেক বর্ধমান জেলা ভাগের পরে সিপিএমেরও সাংগঠনিক ভাগ হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানে প্রথম সম্মেলন শুরু হয়েছে শুক্রবার দুপুরে। সিপিএম সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান শহরে ২৬ বছর পরে জেলা সম্মেলন হচ্ছে। ৩০টি এরিয়া কমিটি, জেলা কমিটির সদস্য ও বিভিন্ন শাখা সংগঠন মিলিয়ে ৪১০ জন প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন। দল সূত্রে জানা যায়, কেতুগ্রাম ১ ছাড়া বাকি ২৯টি এরিয়া কমিটির সম্মেলন নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, “কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বিভিন্ন জায়গা আমাদের কাছে গত আট বছর ধরে অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। সেই সব জায়গায় আমরা মিছিল করেছি, ছোট সভা করেছি। কিন্তু সম্মেলন করে অনুকূল পরিস্থিতি হারাতে যাইনি। তাই থানা সদর কেতু্গ্রামে সম্মেলন করা হয়েছে।” ২০০৯ সালের পর থেকে কেতুগ্রাম ১ ব্লক সদর কান্দরায় সিপিএমের দলীয় কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। তখন থেকেই দল কোনও সম্মেলন করতে পারেনি।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন, শনিবার প্রতিনিধিদের বক্তব্য রাখার পালা ছিল। তা শোনার জন্য আউশগ্রামের সুরেন হেমব্রম, কাটোয়ার সাধনা মল্লিক, রায়নার উদয় সরকার ও মন্তেশ্বরের মহম্মদ হেদায়েতুল্লাকে নিয়ে সভাপতিমণ্ডলী গঠন করা হয়। সিপিএম সূত্রের খবর, প্রতিনিধিরা প্রথমেই বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এক প্রতিনিধি জানান, তৃণমূল গঠিত হওয়ার আগে নীতি ও আদর্শে দলের মূল শত্রু ছিল কংগ্রেস। তাদের হাতে খুন হয়েছেন দলের অনেকে। তাঁর প্রশ্ন, “নীতি-আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে ভোটের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা কি হঠকারিতা হয়নি?”

Advertisement

অনেক প্রতিনিধি দাবি করেন, তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে সমদূরত্ব বজায় রেখে কী ভাবে রাজনৈতিক লড়াই করা যায়, তা দলের নেতৃত্বকে ঠিক করতে হবে। এক প্রতিনিধির কথায়, “শুধু সাম্প্রদায়িক দল বলে প্রচার করলে হবে না। বিজেপি শাসিত রাজ্যে মানুষ যে ভাল নেই সেটাও তুলে ধরতে হবে। দলিত, কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপন্ন হচ্ছেন সেখানে, তা তথ্য দিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে।”

সম্মেলনের প্রতিনিধিদের আরও দাবি, রাজ্যে শাসকদলের উপরে ‘বিরক্ত’ হচ্ছেন মধ্যবিত্তেরা। চাষে বিপর্যয়, ফসলের দাম না পাওয়ায় কৃষকের বড় অংশও ক্ষুব্ধ। এ ছাড়া পঞ্চায়েতের দুর্নীতি, তৃণমূল নেতাদের আচরণ নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ জমেছে। ওই প্রতিনিধিদের মতে, “শাসকদলের বিরুদ্ধে মাঠে নামার এমন অনুকূল পরিবেশ আগে পাওয়া যায়নি। দলের নেতৃত্বকে এ ব্যাপারে দিশা দেখাতে হবে।’’ দল থেকে নানা কারণে দূরে সরে যাওয়া গরিব মানুষকে কী ভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, তা-ও নেতৃত্বকে ঠিক করতে হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

সম্মেলনের শেষ দিন, রবিবারের দুপুরে নেতৃত্ব কী বার্তা দেন, সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement