পাশের খনি থেকে উদ্ধার কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র।
ডুলি খারাপ হয়ে পড়ায় ফের খনিগর্ভে আটকে থাকতে হল শ্রমিক-কর্মীদের। বুধবার অন্ডালের বাঁকোলা এরিয়ার নাককাজোড়া কোলিয়ারিতে ঘণ্টা তিনেক আটকে রইলেন ৪৩ জন শ্রমিক। পরে খনিগর্ভ দিয়ে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে পাশের খনিতে নিয়ে গিয়ে তাঁদের উপরে তোলার ব্যবস্থা করা হয়।
গত সপ্তাহে পাণ্ডবেশ্বর-ফুলবাগান কোলিয়ারিতেও একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। বারবার এমন ঘটনায় খনিতে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগে সরব হয়েছে নানা শ্রমিক সংগঠন। ইসিএল কর্তৃপক্ষের যদিও দাবি, আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি।
নাককাজোড়া কোলিয়ারি সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতের পালিতে কাজ করতে ভূগর্ভে নামেন ওই কর্মীরা। ভোর ৪টে নাগাদ তাঁরা জানতে পারেন, খনিতে ওঠানামার ডুলিটি খারাপ হয়ে গিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত কর্মীরা খনি কর্তৃপক্ষকে খবর দেন। তার পরে বুধবার সকাল ৮টা নাগাদ খনিতে নামেন কোলিয়ারির সুরক্ষা আধিকারিক ওমপ্রকাশ চৌরাশিয়া। তিনি কর্মীদের বুঝিয়ে এই খনির সঙ্গে যুক্ত পাশের বিশ্বেশ্বরী কোলিয়ারিতে নিয়ে গিয়ে ডুলি দিয়ে তাঁদের বের করে আনার ব্যবস্থা করেন। সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ প্রথমে ছ’জনকে উপরে আনা হয়। তার পরে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় সকলকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। খনিকর্মী মরা বাউরির ক্ষোভ, ‘‘ভোর ৪টে নাগাদ জানানো সত্ত্বেও সকাল ৮টার আগে কোনও কর্তা আসেননি।’’
ইসিএলের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগে সোচ্চার হয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। সিটু নেতা নিরালা নুনিয়া, আইএনটিটিইউসি-র নরেন চক্রবর্তী, এআইটিইউসি-র গুরুদাস চক্রবর্তীদের দাবি, এই খনিতে ওঠানামার জন্য দু’টি ডুলি আছে। একটি বয়লারে চলে। সেটি মাস দেড়েক আগে থেকে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ চালিত ডুলিটি দিয়ে ওঠানামার কাজ চলছিল। সেটি মঙ্গলবার রাতে বিকল হয়ে যায়। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘এই ঘটনা থেকেই প্রমাণ হয়, খনি কর্তৃপক্ষের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কোনও হেলদোল নেই।’’ আইএনটিইউসি নেতা তরুণ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘সাতগ্রাম এরিয়ার জেকেনগর কোলিয়ারিতে গত দু’বছরে বারবার এমন ঘটেছে। খনি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাই সব রকম বিধি উপেক্ষা করা হচ্ছে। খনি কর্তৃপক্ষ এ ভাবে কোলিয়ারগুলি বন্ধ করতে চাইছেন।’’
ফুলবাগান কোলিয়ারির ঘটনার পরে ইসিএলের এক কর্তা জানিয়েছিলেন, বহু দিনের পুরনো যন্ত্রাংশ দিয়ে কাজ চলছে। খারাপ হয়ে গেলে তা সারানোর যন্ত্রাংশ সঙ্গে সঙ্গে মেলে না। নতুন যন্ত্র বসানোও খরচসাপেক্ষ। তাই সময় লাগে। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘কারিগরি কারণে এমন ঘটতেই পারে। আতঙ্কের কিছু নেই।’’