বেহাল পুজারি মাঠ। উখড়ায় ওমপ্রকাশ সিংহের তোলা ছবি।
খেলাধুলোর জন্য ভরসা একটি মাঠ। সেটি আবার স্কুলের নিজস্ব মাঠ। যে কোনও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে মেলা-উৎসব, সবেরই আসর বসে এই মাঠে। মাঠের অভাবে খেলাধুলোর চলও কমছে উখড়ায়।
ফুটবল হোক বা ক্রিকেট, সবেরই অনুশীলন হয় কুঞ্জবিহারী ইনস্টিটিউশনের মাঠে। সব রকম প্রতিযোগিতাও সেখানেই। উখড়া ফুটবল অ্যাকাডেমি ও উখড়া স্পোটিং ক্লাব যৌথ ভাবে একটি ফুটবল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালায়। একটি বড় প্রতিযোগিতারও আয়োজন করে। প্রাক্তন ফুটবলার সৌমেন রায়, ২২ বছর ধরে ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসা উখড়া গেমস অ্যান্ড কালচালার অ্যাসোসিয়েশেন সম্পাদক মাখন মুখোপাধ্যায়েরা জানান, এলাকায় যথেষ্ট সম্ভাবনাময় ক্রিকেট ও ফুটবল খেলোয়াড় থাকলেও তারা নিয়মিত অনুশীলন করতে পারে না মাঠের অভাবে। স্কুলের মাঠটিকে স্টেডিয়াম হিসেবে তৈরি করার জন্য দীর্ঘ দিনের দাবি রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। কিন্তু সে ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ হয়নি। যারা একটু ভাল খেলাধুলো করে তারা চলে যাচ্ছে দুর্গাপুরে।
সাহিত্য চর্চার আসরেও শিল্পাঞ্চলের মধ্যে উখড়ার বিশিষ্ট স্থান রয়েছে। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে, ১৯৩১ সালে উখড়ার বাসিন্দা চিকিৎসক, কবি কালীকিঙ্কর সেনগুপ্তের ‘মন্দিরের চাবি’ বইটি ইংরেজ সরকার রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে বাজেয়াপ্ত করে। এ ছাড়া উখড়া কুঞ্জবিহারী ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সত্যকিঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গীতাতত্ত্বসার আলোচনা’, স্বাধীনতা সংগ্রামী সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কালো মানিকের কড়চা ও বিচিত্র ভাবনা’, ‘পড়শি থাকে ঘরের কাছে’ মতো বইগুলি এখনও পাঠকের নজর কাড়ে। কথিত আছে, সুকুমারবাবুরা পাণ্ডবেশ্বরে একটি সাহিত্যসভার আয়োজন করেন, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু।
উখড়ার বর্তমান লেখকদের মধ্যে বলরাম দে’র ‘নবীন আশা নতুন দিশা’ সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দিন কয়েক আগে বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলরামবাবুর লেখা ‘অন্তঃবিহীন পথ’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এই বইতে ব্যক্তিগত বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা সাবলীল গদ্যে বলে চলেন বলরামবাবু। উখড়া থেকে প্রকাশিত হওয়া সাহিত্য পত্রিকার তালিকাটিও বেশ দীর্ঘ। সত্তরের দশকের ‘মুকুর’, ‘কালস্রোত’ বা আটের দশকের ‘ঐক্যতান’ একেবারে প্রথম দিকের সাহিত্য পত্রিকা। কালের নিয়মে এগুলি বন্ধ হয়ে গেলেও উখড়ার সাহিত্য আলোচনায় এখনও উঠে আসে পত্রিকাগুলির কথা। উখড়া থেকে প্রকাশিত বর্তমান সাহিত্য পত্রিকাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অর্ণব’, ‘বিজন’, ‘সাগ্নিক’, ‘মধ্যাহ্ন’, ‘কালিকিঙ্কর’ প্রভৃতি। এ নছাড়া অল্প সময়ের মধ্যেই নজর কেড়েছে ‘কাবিওয়ালা’ পত্রিকাটি। পত্রিকা প্রকাশের পাশপাশি সাংস্কৃতিক মত বিনিময়ের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘কৃষ্ণমৃত্তিকা’, ‘মালঞ্চ’-র মতো পত্রিকাগুলির আয়োজিত বিভিন্ন সাহিত্যসভা। সেখানে নিয়মিত গল্প, কবিতা পাঠের আসর বসে। তা ছাড়া বাউলতত্ত্ব, সূফি দর্শন থেকে শুরু করে বঙ্কিম, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যও হয়ে ওঠে সাহিত্য আলোচনার বিষয়।
শুধু সাহিত্য পত্রিকাই নয়, উখড়া থেকে এক সময় প্রকাশিত হতো উখড়া দর্পণ, কোলফিল্ড পোস্ট, কোলফিল্ড এক্সপ্রেস, মোহভঙ্গের মতো বিভিন্ন আঞ্চলিক সংবাদপত্রও। এলাকার সাংস্কৃতিক মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান জুড়ে রয়েছে নেতেজি স্পোর্টিং ক্লাব। তবে সাহিত্য পত্রিকাগুলি চালানোর ক্ষেত্রে প্রধান বাধা অর্থের। শর্মিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায়, মহম্মদ মানিকের মতো বিভিন্ন পত্রিকা সম্পাদকের দাবি, ‘‘সরকারি উদ্যোগে এলাকার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার।’’
(শেষ)