ফেরো স্ক্র্যাপ নিগম লিমিটেড। —ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘ফেরো স্ক্র্যাপ নিগম লিমিটেড’ (এফএসএনএল)-এর বিলগ্লিকরণের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০২২ সাল থেকে আন্দোলন করছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। গঠন করা হয়েছে ‘সেভ এফএসএনএল’ কমিটি। অবিলম্বে বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আর্জি জানিয়ে সম্প্রতি কমিটির তরফে চিঠি দেওয়া হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ কীর্তি আজাদকে। বিষয়টি সংসদে তোলার আশ্বাস দিয়েছেন সাংসদ।
ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে বিদেশি সংস্থার কাছে ইস্পাত উৎপাদনের কাঁচামাল নেওয়া হত। এর ফলে উৎপাদন খরচ বেশি হত। তা এড়াতে ১৯৭৯ সালে কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রকের ‘মেটাল স্ক্র্যাপ কর্পোরেশন লিমিটেড’-এর অধীনে এফএসএনএল গড়ে তোলা হয়। দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত কারখানায় এফএসএনএল-এর মোট ১২টি ইউনিট রয়েছে। সংস্থায় স্থায়ী কর্মী রয়েছেন ৪৪২ জন। এ ছাড়া প্রায় আড়াই হাজার ঠিকাকর্মী রয়েছেন। দুর্গাপুরের সংস্থায় বর্তমানে ৫০ জন স্থায়ী কর্মী রয়েছেন। ২০২২ সালে সংখ্যাটা ছিল ৬৪ জন। এ ছাড়া বেশ কিছু ঠিকাকর্মী রয়েছেন। এফএসএনএলের বিলগ্নিকরণের জন্য ২০২২ সালে ‘গ্লোবাল এক্সপ্রেসন অব ইন্টারেস্ট’ (ইওআই) ডাকে কেন্দ্র। তার পর থেকে চলছে আন্দোলন। শ্রমিকেরা একজোট হয়ে গঠন করেছেন ‘সেভ এফএসএনএল’ কমিটি।
কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, সংস্থা বাঁচাতে আইনি প্রক্রিয়ার সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। আদালতের দ্বারস্থও হওয়া হবে। কারণ এই সংস্থা তৈরি হওয়ার পর থেকে কখনও লোকসান হয়নি। ২০২২-২৩ সালে সংস্থা সরকারকে ৩২ কোটি টাকা ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ২০২২ সালের ইওআই-তে কোনও সংস্থা আগ্রহ দেখায়নি। সম্প্রতি ফের ইওআই ডাকা হয়। ফলে, নতুন করে বিলগ্নিকরণের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কর্মীদের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে প্রতিনিয়ত কাজ হারানোর আশঙ্কা সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।” কমিটির আহ্বায়ক রঞ্জিত শর্মা বলেন, “চুপিসারে এফএসএনএলকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। তাই ৫ বছর ধরে কোনও নিয়োগ হয়নি। কর্মীরা চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। কিন্তু আমরা সংস্থা বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত লড়ব।”
সম্প্রতি রঞ্জিতের নেতৃত্বে কমিটির তরফে এক প্রতিনিধি দল সাংসদ কীর্তির সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি তাঁকে জানান। কমিটির সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের একটি চিঠি তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। চিঠিতে বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে এফএসএনএলকে বাঁচানোর আর্জি জানানো হয়েছে সাংসদের কাছে। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, এফএসএনএলকে স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (সেল) সঙ্গে সংযুক্ত করা হোক। রঞ্জিত বলেন, ‘‘একমাত্র সেলের সঙ্গে সংযুক্তিকরণ হলেই সংস্থা সুরক্ষিত থাকবে। কাজ হারানোর আতঙ্ক থেকে রেহাই পাবেন কর্মীরা। সাংসদকে আমরা এই দাবি কেন্দ্রে জানানোর আর্জি জানিয়েছি।’’ কীর্তি জানান, তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে সংসদে তুলে ইস্পাত মন্ত্রকের কাছে এফএসএনএল বাঁচানোর দাবি জানাবেন।