JItendra TIwari

রাগ-অভিমান ছিল, ভেঙেছে: জিতেন্দ্র

কেন জিতেন্দ্রবাবু দল ছেড়েছিলেন? তৃণমূলের একটি সূত্রের মতে, রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের অনুগামীদের সঙ্গে জিতেন্দ্রবাবুর অনুগামীদের বিরোধ এর অন্যতম কারণ।

Advertisement

সুশান্ত বণিক ও নীলোৎপল রায়চৌধুরী

আসানসোল ও রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:০৩
Share:

(বাঁ দিকে) আসানসোলে শুক্রবার দেখা গিয়েছিল এমনই ছবি। (ডান দিকে) শনিবার হরিপুরের কার্যালয়ে ফিরল জিতেন্দ্র তিওয়ারির ছবি। ফাইল চিত্র ও নিজস্ব চিত্র।

প্রথমে আসানসোলের পুর-প্রশাসক ও তৃণমূলের জেলা সভাপতির পদ ত্যাগ, তার পরে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা। শেষে তৃণমূলেই প্রত্যাবর্তন। জিতেন্দ্র তিওয়ারির কী হল, কেন হল, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। পাশাপাশি, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে খবর, দলে ফিরলেও, জিতেন্দ্রবাবুকে তাঁর পুরনো পদগুলি ফেরানোর সম্ভাবনা আপাতত কম।

Advertisement

শুক্রবার রাতে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, প্রশান্ত কিশোরের বৈঠক শেষে জিতেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আমার দল ছাড়ার সিদ্ধান্তে দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) দুঃখ পেয়েছেন। তাই আমি আর রাগ বা অভিমান ধরে রাখতে পারিনি। আমি দলেই থাকছি।’’

কিন্তু কেন জিতেন্দ্রবাবু দল ছেড়েছিলেন? তৃণমূলের একটি সূত্রের মতে, রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের অনুগামীদের সঙ্গে জিতেন্দ্রবাবুর অনুগামীদের বিরোধ এর অন্যতম কারণ। সম্প্রতি জেলায় তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলে মলয়বাবু ও জিতেন্দ্রবাবুকে যথাক্রমে জেলা চেয়ারম্যান ও জেলা সভাপতি করা হয়। কিন্তু সাতটি ব্লকের মাত্র দু’টিতে জিতেন্দ্রবাবুর অনুগামী বলে পরিচিতেরা সভাপতি হয়েছিলেন। এ দিকে, আসানসোল পুরসভায় প্রশাসকমণ্ডলীতে কাউন্সিলর নন, অথচ, রাজ্য নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষক-নেতার অন্তর্ভুক্তিও জিতেন্দ্রবাবু ভাল ভাবে নেননি বলে দলীয় একটি সূত্রের দাবি। যদিও জিতেন্দ্রবাবুর দাবি, ‘‘এ সব কোনও কারণই নয়।’’ এসএমএস ও ফোন করেও উত্তর মেলেনি মলয়বাবুর।

Advertisement

জিতেন্দ্রবাবু তৃণমূল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়, তাঁর বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার জল্পনা। কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে মূলত বেঁকে বসেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় ও দলের জেলা নেতৃত্ব। বাবুল প্রকাশ্যেই ‘ব্যক্তিগত’ মত জানিয়েও জিতেন্দ্রর দলে যোগ দেওয়ার জল্পনার বিরোধিতা করেন। পাশাপাশি, বিজেপির আসানসোল জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, ‘‘জিতেন্দ্রবাবুর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা শুনতেই ১৫ ডিসেম্বর আমাদের জেলা কমিটি বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করে। প্রত্যেকেই জিতেন্দ্রবাবুর বিজেপি-তে আসার বিরুদ্ধে সরব হন। কারণ, তাঁর নেতৃত্বেই সাংসদ বাবুলের বুকে পাথর মারা, দলের যুব জেলা সভাপতি অরিজিৎ রায়-সহ অনেককে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর মতো ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’’ এ কথা জানিয়ে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাকে চিঠিও দেওয়া হয়, জানান লক্ষ্মণবাবুরা। পাশাপাশি, জিতেন্দ্র-‘বিদায়ে’র খবরে জেলায় তৃণমূলের নেতা, কর্মীদের একাংশ ‘উৎসব’ পালন শুরু করেন।

তৃণমূল সূত্রের খবর, এমন ঘটনাপ্রবহের মধ্যেই একদা দলের জেলা পর্যবেক্ষক এবং রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে শুক্রবার রাতে কলকাতায় বৈঠক হয় জিতেন্দ্রবাবুর। সেখান থেকেই তিনি তৃণমূলে থাকার কথা জানান। এ দিকে, দলের রাজ্য নেতৃত্ব সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল থেকে তাঁর ইস্তফাপত্র গৃহীত হয়নি। পাশাপাশি, এই ঘটনাপ্রবাহের শুরু থেক জিতেন্দ্রবাবুর মূল ‘ক্ষোভে’র নিশানায় যিনি ছিলেন, সেই ফিরহাদ হাকিমের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর থেকেও একটি ‘ইতিবাচক’ চিঠি মেলে বলে জিতেন্দ্রবাবুর দাবি।

শনিবার জিতেন্দ্রবাবু শেষ পর্যন্ত বলেন, ‘‘বিজেপি-তে যাব কখনই বলিনি। নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমার অভিমান মিটে গিয়েছে। তাই দলে ফেরত এসেছি।’’ এ দিন যাঁরা তৃণমূল ছেড়ে যাঁরা বিজেপিতে গেলেন, তাঁদের প্রসঙ্গে জিতেন্দ্রবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়।’’

এ দিকে, শনিবারই তাঁর দল ছাড়ার যে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তা নস্যাৎ করে দেন বারাবনির তৃণমূল বিধায়কবিধান উপাধ্যায়ও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement