সুনীল যাদব।
জাতীয় সড়কের পাশে গাড়ির ডিকি থেকে ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধারের ঘটনায় দুর্গাপুরের এক জেডিইউ নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সুনীল যাদব নামে ওই নেতা নিহতের ব্যবসায় সঙ্গী ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
পুলিশ জানায়, নিহত ব্যবসায়ী ত্রিভুবন সিংহের স্ত্রী অনিতা সিংহ এই ঘটনার পিছনে সুনীলবাবুর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। শনিবার রাতে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় চেক পোস্টের কাছ থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। রবিবার আসানসোল আদালতে তোলা হলে ধৃতকে ছ’দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের স্টিল হাউস কলোনি এলাকার বাসিন্দা ত্রিভুবনবাবু গত মঙ্গলবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন। নিজের গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি তিনি। অনিতাদেবী পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা ত্রিভুবনবাবুর মোবাইলে বারবার যোগাযোগ করলে কোনও এক জন ফোনটি ধরে কথা না বলেই কেটে দেয়। বুধবার বিকেলে দুর্গাপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে রানিগঞ্জের পঞ্জাবি মোড়ের কাছে আমরাসোঁতায় গাড়িটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন আশপাশের বাসিন্দারা। গাড়ির ডিকি থেকে পুলিশ বছর পঁয়ত্রিশের ত্রিভুবনবাবুর দেহ উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, ত্রিভুবনবাবুর জমি কেনাবেচা, লোহার কারবার, বিমা সংস্থার সঙ্গে যোগ, সুদের কারবার-সহ নানা ব্যবসা ছিল। তাঁর স্ত্রী পুলিশকে জানান, সুনীলবাবুর কাছে তাঁর স্বামীর ১৭ লক্ষ টাকারও বেশি পাওনা ছিল। খুনের সঙ্গে সুনীলবাবুর যোগ রয়েছে বলে দাবি করেন অনিতাদেবী। সুনীলবাবু অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। ঘটনার পরে ফোনে যোগাযোগ করা হলে পারিবারিক প্রয়োজনে তিনি বিহারের সিওয়ানে রয়েছেন জানিয়ে সুনীলবাবু দাবি করেছিলেন, ত্রিভুবনবাবুর সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন থাকলেও খুনের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই। কিন্তু ত্রিভুবনবাবুর পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ করার পরেই পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ সুনীলবাবুর মোবাইলের টাওয়ারের উপরে নজর রাখা শুরু করে। শুক্রবার ত্রিভুবনবাবুর দেহ সৎকারের জন্য নিয়ে চলে যাওয়ার পরে সুনীলবাবু নিহতের বাড়িতেও গিয়েছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
পুলিশ জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় দেখা যায়, সুনীলবাবুর মোবাইলের অবস্থান আসানসোলের দিকে এগোচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে তা ঝাড়খণ্ডের দিকে যেতে শুরু করে। সঙ্গে-সঙ্গে চিত্তরঞ্জন থানাকে সতর্ক করে গোয়েন্দা বিভাগ। শেষে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় চেকপোস্টের ১ নম্বর গেটে সুনীলবাবুকে ধরে পুলিশ। রাতে রানিগঞ্জে এনে তাঁকে জেরা করা হয়। পুলিশের এক কর্তা জানান, জেরায় বিস্তর অসঙ্গতি মেলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সুনীলবাবু খুনের সঙ্গে জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে ওই পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ধৃতকে জেরা করলে ব্যবসায়ীকে খুনের ঘটনার অনেক তথ্য মিলবে বলে মনে করছি আমরা।’’ পুলিশ আরও জানায়, যে বিমা সংস্থার সঙ্গে ত্রিভুবনবাবুর যোগাযোগ ছিল, প্রয়োজনে সেই সংস্থার দুর্গাপুরের অফিসের কাজকর্মও খতিয়ে দেখা হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত সুনীলবাবু বরাবর নিজেকে হিন্দি বলয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করে থাকেন। তাঁকে কখনও লোকজনশক্তি, কখনও আরজেডি, আবার কখনও জেডিইউ-এর হয়ে বিভিন্ন ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা গিয়েছে। গত পুরসভা নির্বাচনে আরজেডি-র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পরে লোকসভা ভোটে তিনি জেডিইউ-এর প্রার্থীও হন। এ দিন আদালত থেকে বেরোনোর সময়ে অবশ্য তিনি দাবি করেন, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। এর পিছনে আসানসোলে কয়েক বছর আগে খুন হওয়া এক প্রোমোটারের স্ত্রীর হাত রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। যদিও পুলিশ এমন কোনও তথ্য এখনও পায়নি বলে জানিয়েছে।