বাতিল বহু যাত্রা, নোটের ধাক্কায় কাবু বুকিং অফিস

নতুন কোনও বায়নার নাম নেই। বাতিল হচ্ছে পুরনো অনেক বায়নাও। নোট বাতিলের জেরে বেশ বিপাকে খনি-শিল্পাঞ্চলের যাত্রার বুকিং সংস্থাগুলি। এই ক্ষতি মিটবে কী ভাবে, চিন্তায় পড়েছে তারা।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৫৯
Share:

নতুন কোনও বায়নার নাম নেই। বাতিল হচ্ছে পুরনো অনেক বায়নাও। নোট বাতিলের জেরে বেশ বিপাকে খনি-শিল্পাঞ্চলের যাত্রার বুকিং সংস্থাগুলি। এই ক্ষতি মিটবে কী ভাবে, চিন্তায় পড়েছে তারা।

Advertisement

রানিগঞ্জের রানিসায়ের মোড়ে যাত্রা বুকিংয়ের বেশ কিছু অফিস রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা করছে সেগুলি। প্রায় ৩৫ বছরের পুরনো ‘নাট্যমন্দির’ সংস্থার কর্ণধার সন্দীপ ভাণ্ডারি জানান, যাত্রা-থিয়েটারের এই বুকিং চালু করেছিলেন তাঁর বাবা-জেঠারা। গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে ৩৫টি যাত্রার বুকিং হয়েছিল তাঁদের কাছে। এ বারও সেই রকম বুকিং শুরু হয়েছিল। কিন্তু পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিল হওয়ার পরেই তা বাতিল হতে থাকে। বাঁকুড়ার কেন্দুয়াড়ি মোড়, বীরভূমের দিঘলপাহাড়ি, পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থেকে বায়না মিলেছিল। কিন্তু সবই বাতিল হয়ে গিয়েছে।

সন্দীপবাবু জানান, গত বারের তুলনায় এ বার ২৬টি যাত্রা কম করছেন তাঁরা। পাণ্ডবেশ্বরের শোনপুর বাজারিতে দু’দিন ও পুরুলিয়ার চিরুডিতে এক দিন যাত্রা হয়েছে। তিনি বলেন, “পুরুলিয়ার চেলিয়ামায় একটি ফ্রি শো বায়না হয়েছে। ফ্রি শো-তে খুব কম খরচের অপেরাকেই ডাকেন আয়োজকেরা। এই ফ্রি শো-এর ভরসায় কোন বুকিং অফিস চলতে পারে না।”

Advertisement

আর এক বুকিং অফিস ‘যাত্রামন্দির’-এর মালিক ভক্তি মাহাতোর গলাতেও একই আক্ষেপ। তিনি জানান, পুরুলিয়ার কাশিপুর, আনাড়া, পাড়া ও পুরুলিয়া শহর-সহ নানা জায়গা থেকে মোট সাত রাত ও বীরভূমের সাঁইথিয়ায় এক দিনের বায়না মিলেছিল রথের আগে। কিন্তু দীর্ঘ দিনের পুরনো সব যাত্রা সংগঠকও বুকিং বাতিল করেছে। ভক্তিবাবু বলেন, “২০ ডিসেম্বর বীরভূমের অভিরামপুর থেকে একটি ক্লাব সরস্বতী পুজোয় ফ্রি শো-এর বায়না দিয়ে গিয়েছে। নগদের অভাবে এ ভাবে যাত্রা শিল্প মার খাচ্ছে।’’ গত বার নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে যেখানে ১০৫টি বুকিং হয়েছিল, এ বার তা পঞ্চাশে নেমেছে বলে জানান তিনি। ভক্তিবাবুর দাবি, পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে সে নিয়ে সংগঠকদের মধ্যে রীতিমতো অনিশ্চয়তা থাকায় কোনও থিয়েটার বা মেলার বুকিংও পাওয়া যাচ্ছে না।

ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরাও, জানান কুড়ি বছরের পুরনো ‘যাত্রা নিকেতন’-এর কর্তা বিপত্তারণ মাঝি। রানিগঞ্জের কুমারবাজারের ‘যাত্রা উৎসব কমিটি’র কর্তা রত্নপাণি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা ২০০৭ থেকে উৎসব করছি। এ বার নোট বাতিলের জেরে আতঙ্কে পড়ে বুকিং করছিই না। যা ক্ষতি হবে তা অপূরণীয়।’’

শোনপুর বাজারি গ্রাম লাগোয়া মাঠে ছ’বছর ধরে যাত্রা আয়োজন করছে ‘আমরা ক’জন’। তাদের পক্ষে প্রদীপ মণ্ডল জানান, প্রতি বছর লাভ হয়। এ বার ৫ ও ৬ ডিসেম্বর দু’টি যাত্রা পরিবেশন করেছেন তাঁরা। খরচের অর্ধেক টাকাও ওঠেনি। নোট বাতিলের জেরেই এই ক্ষতি, আক্ষেপ তাঁদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement