হাল ফেরাতে ‘লক্ষ্য’ ভরসা মেডিক্যালে

‘লক্ষ্য’ দিয়েই লক্ষ্যপূরণ করতে চাইছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৫৫
Share:

‘লক্ষ্য’ দিয়েই লক্ষ্যপূরণ করতে চাইছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

Advertisement

হাসপাতালের লেবার রুম অপরিচ্ছন্ন থাকায় দেশের একটা বড় অংশের শিশু ও প্রসূতি সংক্রমণে মারা যায়। ওই মৃত্যুর হার কমাতে কেন্দ্র সরকার জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মাধ্যমে সম্প্রতি ‘লক্ষ্য’ নামে (‌লেবার রুম কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট ইনিসেটিভ) একটি প্রকল্প নিয়ে এসেছে। রাজ্যের এসএসকেএম থেকে বর্ধমানের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও কালনা মহকুমা হাসপাতাল-সহ ৩৪টি হাসপাতালে ওই প্রকল্প থেকে লেবার রুমের সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো হবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরও একটি বিশেষ দল গঠন করে ওই দু’টি হাসপাতালের লেবার রুমে কোথায় ঘাটতি রয়েছে তা খুঁজে দেখছে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, কাটোয়া ও কালনা মহকুমা হাসপাতালের গত কয়েক বছরের শিশু ও প্রসূতি মৃত্যু সংক্রান্ত একটি তথ্য দিতে হয়েছিল স্বাস্থ্য দফতরকে। ওই মৃত্যু কী কারণে হয়েছিল, তারও নথি জমা দিতে হয়। ওই নথি পাওয়ার পর বিশেষ দল পরিদর্শনে আসেন। তাঁরা লেবার রুম ও অপারেশন থিয়েটার পরীক্ষা করে নম্বর দেন। সেখানে কাটোয়া মহকুমা ওটি-র জন্য পেয়েছিল ৯০ শতাংশ আর লেবার রুমে ৮৭ শতাংশ। অনেক নীচে ছিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও কালনা হাসাপাতালের লেবার রুম ও ওটি। এ বার ওই দুটির আধুনিককরণ করার জন্য ‘লক্ষ্য’ নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে দু’হাজার শিশু জন্মায়। তার পরেও নিয়মিত ভাবে প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। গত বছরেই সরকারি হিসেবের চেয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি মৃত্যু (৬৪ জন) বেশি হয়েছিল। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘কাটোয়া হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যু গড়ে ২-৩ শতাংশ। সেখানে মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি মৃত্যু প্রায় ৭ শতাংশ। আমরা জানি ‘রেফার’ হয়ে খুব খারাপ অবস্থায় প্রসূতিদের আনা হয়। কিন্তু তথ্য অনুযায়ী, লেবার রুমে সংক্রমণের জন্য প্রসূতিদের একটা বড় অংশ মারা যাচ্ছেন।’’

কয়েক মাস আগে স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লেবার রুম ও ওটি-র ঘর দেখে তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব অনিল বর্মাকে একটি রিপোর্ট দেয়। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, লেবার রুমের জানলা খোলা, টেবিলগুলো অপিরচ্ছন্ন। চারিদিকে রক্তমাখা তুলো, গজ, কাপড়ের টুকরো পড়ে থাকে। জুতো পড়ে চিকিৎসক, রোগীর পরিজনেরা অবাধ যাতায়াত করেন। জামা-কাপড় পাল্টানোর ছোট ঘরটিকে প্রসূতিরা শৌচাগার বানিয়ে ফেলেছেন। এমনকি, জন্মের পরেই শিশুকে উষ্ণ রাখার যে প্রক্রিয়া, অর্থাৎ ‘হাইপোথার্মিয়া ম্যানেজমেন্ট’ লেবার রুমে যা থাকা বাধ্যতামূলক, বহু জায়গাতেই তার দেখা নেই। শীর্ষকর্তারা স্বীকার করেছেন, খোলনলচে বদলানোর হাজারো চেষ্টার মধ্যে ব্যর্থতার ছাপ সবচেয়ে বেশি এই লেবার রুমেই।

মেডিক্যাল কলেজের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা বলেন, “লক্ষ্য প্রকল্পের মাধ্যমে লেবার রুমের সঙ্গে যুক্তদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লেবার রুমের পরিকাঠামো, রোগীদের যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো হবে।’’ ওই প্রকল্পে লেবার রুমকে সংক্রামণমুক্ত করা, রোগীর পরিজনদের বসার ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement