ভাটি ভাঙার পরে চলছে মহিলাদের বিক্ষোভ, রবিবার জামালপুরের গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
এক হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা স্লোগান, ‘মদ হঠাও, জীবন বাঁচাও।’ অন্য হাতে শক্ত করে ধরা বাঁশের লাঠি। মহিলাদের মিছিল চলেছে। গন্তব্য, চোলাইয়ের ‘ভাটি’। সেখানে ভাঙচুর চালিয়ে পরের লক্ষ্য, ঠেক। সেখানে অবশ্য মদ্যপেরা ‘প্রতিরোধ’ করতে যান। অবশ্য খানিক বাদে মহিলাদের লাঠির সামনে পগারপার তাঁরাও। রবিবার চোলাই রুখতে এমনই ‘অভিযান’ দেখল জামালপুরের সারংপুর-দাদপুর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুরের কাজ সেরে গ্রামের মহিলারা চোলাইয়ের বিরুদ্ধে মিছিল শুরু করেন। ‘অকাল মৃত্যু আর হতে দেব না’, ‘আমাদের পরিবারকে বাঁচতে দাও’— আওয়াজ ওঠে এমনও। গ্রাম-পরিক্রমা শেষে মিছিল ঢোকে রুইদাসপাড়ায়। সেখানেই রয়েছে মদের ভাটি ও ঠেক।
মহিলাদের মারমুখী মেজাজ দেখে ঘাবড়ে যান ওই সব ভাটির মালিকেরা। চোলাইয়ের হাঁড়িতে দু’-একটা বাড়ি পড়তেই তাঁরা ‘দে ছুট’। এর পরেই ঠেকগুলিতে যান মহিলরা। সেখানে ‘প্রতিরোধ’ তৈরি চেষ্টা করেছিল মদ্যপের দল। কিন্তু মহিলাদের রণংদেহি মেজাজের সামনে মিনিট পনেরোর বেশি টিকতে পারেননি তারা। তার পরে নির্বিঘ্নে শুরু হয় একের পরে এক ঠেক-ভাঙচুর। চোলাই ও মদ তৈরির বহু উপকরণ নষ্ট করে দেয় এই প্রমীলা বাহিনী।
তবে চোলাইয়ের বিরুদ্ধে এমন রোষ কেন? মহিলারা জানান, গ্রামের অধিকাংশের বাড়ির ছেলেরাই দিনমজুরি করেন। কিন্তু তাঁদের অনেকেই কাজ সেরে বাড়ি নয়, ঠেকে যান। সেখানে আকণ্ঠ মদ্যপান করে টলতে টলতে ঘরে ঢোকেন তাঁরা। সমস্বরে মহিলাদের অভিযোগ, ‘‘বাড়িতে অহেতুক চিৎকার তো রয়েইছে। প্রতিবাদ করলে জোটে মার। ঘরের বাচ্চাগুলোকেও রেয়াত করে না।’’ বারুইপুর থেকে গলসি, রাজ্যের নানা প্রান্তে চোলাই খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা বারবারে সামনে এসেছে। তার পরেও হুঁশ ফেরেনি, দাবি মহিলাদের।
শুধু তাই নয়, দিনে যে কটা টাকা রোজগার করেন বাড়ির পুরুষরা, তা তো নেশার ঠেকে উড়ে যাচ্ছেই। এমনকী বাড়ির বাসন, ঘরের কুলুঙ্গিতে তিলতিল করে জমানো কয়েকটা টাকাতেও নেশার জন্য হাত দিচ্ছিলেন ছেলেরা, অভিযোগ চম্পা সোরেন, মণি মুর্মুদের।
মহিলাদের আরও অভিযোগ, ঠেক ভাঙার জন্য বারবার প্রশাসনের কাছে দরবার করেও লাভ হয়নি। তাই শেষমেশ নিজেরাই উদ্যোগী হয়েছেন বলে জানান চম্পা, মণিরা। তাঁরা বলেন, ‘‘পরিবার আর বাচ্চাগুলোর মুখ চেয়ে এটা আমাদের করতেই হতো।’’ স্থানীয় পাঁচড়া পঞ্চায়েতের প্রধান অশোক দাসেরও ক্ষোভ, “প্রশাসন চুপ থাকাতেই মেয়েরা লাঠি হাতে মদের কারবারিদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন।”
যদিও বিডিও (জামালপুর) সুব্রত মল্লিকের দাবি, ‘‘মাঝেসাঝে পুলিশ-আবগারি দফতর অভিযান চালায়। আগামী সপ্তাহ থেকে ফের অভিযান শুরু হবে।”