—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কুকুরের ‘ঘেউ’ না বিড়ালের ‘ম্যাঁও’— কার জোর বেশি, এই চর্চা চলতেই পারে। অন্তত কুকুর বা বিড়ালের কামড়, আঁচড়ের নিরিখে।
সরকারি নথি বলছে, করোনার সময় থেকে কুকুরের কামড়ে জখমের সংখ্যা ওঠানামা করেছে। কিন্তু, বিড়ালের কামড়ের জন্য ফি বছর জখমের সংখ্যা বেড়েই চলছে। গত পাঁচ বছরের তথ্য অনুযায়ী বিড়াল কামড়ে আড়াই গুণ বেশি মানুষ জখম হয়েছেন। পূর্ব বর্ধমানের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০২০ সালে কুকুরের কামড়ে সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক নিয়েছিলেন ৩৪,৭৮৭ জন। করোনার পরে ২০২২ ও ২০২৩ সালে কুকুরে কামড়েছিল যথাক্রমে ৫০,৬৫১ ও ৫৫,৭১০ জনকে। গত বছর সেই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৩৫,৭৪৬-এ। বিড়ালের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে ১৪,৮২৯ জনের নাম কামড়-তালিকায় নথিভুক্ত হয়েছিল। পাঁচ বছরে সেটাই বেড়ে হয়েছে ৩৫,৭৪৬।
প্রশ্ন উঠছে, কুকুরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিড়ালে কামড়ানো বাড়ছে কেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আগেও বিড়ালের কামড়ে জখম হতেন মানুষ। তবে, বিড়ালের কামড় নিয়ে তত ভয় ছিল না, যতটা ছিল কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক হওয়ার ভয়। করোনার পরে মানুষ সচেতন হচ্ছেন। তাই বিড়ালের আঁচড়েও বেশির ভাগ জন ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন। জলাতঙ্কের প্রতিষেধক নিচ্ছেন। তার প্রতিফলন উঠে আসছে সরকারি তথ্যে। বর্ধমান মেডিক্যালের জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান প্রণিতা তরফদার বলেন, “সচেতনতা বেড়েছে বলে বিড়ালের আঁচড়, কামড়েও প্রতিষেধক নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে শুধু প্রতিষেধক নিলে হবে না, সঠিক চিকিৎসারও প্রয়োজন রয়েছে। ইমিউনোগ্লোবুলিন নিতে হবে। সেটা শুধু সরকারি হাসপাতালেই মিলবে।” বর্ধমানের পশুপ্রেমী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আগে মানুষ কুকুরকে বিরক্ত করত। এখন বিড়ালকেও বিরক্ত করছে। তাই কামড়াচ্ছে। কুকুর-বিড়াল নিয়ে কাজ করতে দেখেছি, এক ধরণের রোগের জন্য কামড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে। এই নিয়ে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।”
পশু বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিড়াল পোষায় মানুষের ঝোঁক বাড়ছে। বিড়ালের সংখ্যাও বাড়ছে। তাই কামড় বা আঁচড়ও খাচ্ছে আট থেকে আশি। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের প্রাক্তন অধিকর্তা সোমনাথ মাইতির কথায়, “আগে বিড়াল পোষার ঝোঁক ছিল না। এখন তেমন হওয়ায় বিড়ালের কামড় বা আঁচড় বেশি দেখা যাচ্ছে।” সর্ব ভারতীয়স্তরে ‘অল ইন্ডিয়া ভেটেনারি কাউন্সিল’-এর সহ সভাপতি গুরুচরণ দত্তও মনে করেন, ঘরে বেড়াল রাখার প্রবণতা বেড়েছে বলেই এই পরিবর্তন। তাতে জলাতঙ্কের ভয়ে ঝুঁকি না নিয়ে প্রতিষেধক নেওয়া বেড়েছে।