শাক্ত-বৈষ্ণব মিলে যায় রাসে

কোথাও বাঁশি বাজিয়ে টয়ট্রেন ছুটছে, কোথাও সেই চিরাচরিত রাইরাজা। থিম আর সাবেক ‘থাকা’র যুগলবন্দিতেই সেজে উঠেছে দাঁইহাটের রাস। রবিবার রাত থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড়ে ছোট্ট শহর জমজমাট।

Advertisement

সুচন্দ্রা দে

দাঁইহাট শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫১
Share:

কোথাও বাঁশি বাজিয়ে টয়ট্রেন ছুটছে, কোথাও সেই চিরাচরিত রাইরাজা। থিম আর সাবেক ‘থাকা’র যুগলবন্দিতেই সেজে উঠেছে দাঁইহাটের রাস। রবিবার রাত থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড়ে ছোট্ট শহর জমজমাট।

Advertisement

গঙ্গা তীরের এই শহরে রাসযাত্রার ইতিহাসও বেশ সমৃদ্ধ। জনশ্রুতি, হাজার বছর আগে ‘ইন্দ্রাণী’ নামের ব-দ্বীপ আকৃতির এই এলাকা তন্ত্রসাধনার পিঠস্থান ছিল। দূরদূরান্ত থেকে তান্ত্রিকেরা এসে পটচিত্রে শক্তির আরাধনা করতেন। পরে নদীর পাশে হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধায় অনেকে আসতে শুরু করেন। জমিয়ে বসে কাঁসা, পিতল, নুন, ধান, গুড়, শাঁখের ব্যবসা। সেই সময়েই এখানকার চন্দ্র পরিবারের এক বংশধর বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়ে রাসযাত্রার সূচনা করেন। আজও চন্দ্র বাড়িতে চক্রাকারে পূজিত হন রাধাকৃষ্ণ। ‘দেবদেওয়ালি’ তিথির রাসে এভাবেই মিলে যায় শাক্ত ও বৈষ্ণব মত। আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক অশেষ কয়া জানান, আগে বাড়িতে বাড়িতে রাসযাত্রার পুজো হলেও জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির সাথে সাথে পাড়ার ক্লাবগুলি পুজো শুরু করে। স্বাধীনতা উত্তর দাঁইহাটে প্রচুর ক্লাব গড়ে ওঠায় স্থানীয়েরাও রাসের আনন্দে মেতে ওঠেন।

বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে শহর জুড়ে ৭৫টি পুজো হয়। নিত্যনতুন থিমের পাশাপাশি সাবেক থাকার আকর্ষণও কম নয়। এ বার ৪৭তম বর্ষে সাহাপাড়া নাগরিক মঞ্চের ভাবনা ‘কালিয়া দমন’। সম্পাদক সঞ্জয় সাহা জানান, সাত লক্ষ বাজেটে পরিত্যক্ত জলাজমিতে বাঁশ, খড়, বোল্ডার দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করছেন শিল্পীরা। পুজো হবে শিব-পার্বতীর। গঙ্গামুখী রাস্তার রেড সান ক্লাবের পঁচিশতম বর্ষের ভাবনা ‘বিলুপ্তির পথে বাংলার লোকশিল্প’। সম্পাদক সুকান্ত বৈরাগ্যের কথায়, ‘‘দেড় লাখ খরচে মণ্ডপের ভিতরে মহিরাবণ বধের প্রতিমা থাকছে। আর দেওয়াল জুড়ে থাকছে বস্তা, প্লাস্টিক, চট, মাটি, প্লাইউড দিয়ে ভাদু, টুসু, বাউ‌ল, ঝাপানের খণ্ডচিত্র।’’ স্টেশন লাগোয়া ইয়ং অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে ব্যবসায়ী সমিতি, টোটোচালক ইউনিয়ন মিলে এ বার মণ্ডপে এনেছে দার্জিলিংয়ের ছোটরেল। মণ্ডপের ভিতরে থাকবে ‘মহাকাল’ মূর্তি। সম্পাদক অলোককুমার দাস জানান, গুহার আদলে তৈরি মণ্ডপে হুইসেল বাজানো টয়ট্রেন থাকবে। যা চোখ টানকে দর্শকদের। স্কুল রোডের প্রীতম ক্লাবের থিম ‘বামাখ্যাপার সাধনপীঠ তারাপীঠ’। বিবেকানন্দ ক্লাবের থিম ‘ভূতের রাজত্ব’। সম্পাদক শমিত দের কথায়, ফোম, পাইপ, ঝিনুক দিয়ে তৈরি সাড়ে তিন লাখের মণ্ডপের ভিতরে থাকবে রাইরাজা অর্থাৎ রাধাকৃষ্ণ। নটরাজ সঙ্ঘ আবার পাট কাঠি, রেক্সিন দিয়ে গণপতি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ গড়েছে। সম্পাদক বিপ্লব রায়ের কথায়, ফি বছরই চোখে পড়ার মতো ভিড় হয়। আড়াই লাখ বাজেটে থিমের সঙ্গে থাকাও থাকছে। সমাজবাটি ক্লাবে আবার থাকছে বকাসুর বধ। তরুণ সঙ্ঘ চেনা রাধাকৃষ্ণের প্রতিমা এবং শবশিবতলার বৌদ্ধ সঙ্ঘ মণ্ডপ সাজাচ্ছে পাঁচ ভাই কার্তিকে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement