বর্ধমানের বড়শুল। নিজস্ব চিত্র
আজ, মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক। পূর্ব বর্ধমানে এ বার পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে ছাত্রী সংখ্যা। ছাত্রদের থেকে প্রায় সাত হাজার বেশি ছাত্রী পরীক্ষা দিতে চলেছে। কারণ নিয়ে উঠে এসেছে নানা মত। কেউ বলছেন, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পের টানে, কেউ বলছেন, ছেলেদের ভিন্ রাজ্যে চলে যাওয়ার প্রবণতাই বেড়েছে ছাত্রী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। পরীক্ষা ঘিরে সব রকমের প্রস্তুতিও সারা, জানিয়েছে সংসদ।
বর্ধমান শহরে এ বার স্পর্শকাতর পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ছ’টি। পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বর্ধমান আঞ্চলিক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০,১৪৭ জন। তার মধ্যে ছেলে ১৬,৬৩৬ জন, মেয়ে ২৩,৫১১ জন। মোট পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে ১০৫টি। পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের যুগ্ম কনভেনর তপনকুমার দাস বলেন, ‘‘ডিআইবি-র নির্দেশ মতো ছটি পরীক্ষাকেন্দ্রকে স্পর্শকাতর ঘোষণা করা হয়েছে। এই পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে ঢোকার সময়ে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। স্পর্শকাতর কেন্দ্রে ইনচার্জ, পরীক্ষক মিলিয়ে মাত্র তিন জন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। বাকিরা কেউ পারবেন না।’’ মাধ্যমিকের সময়ে ক্লোজ়ড সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল সমস্ত কেন্দ্রে। সেই ক্যামেরা ছাড়া আরও কোনও ক্যামেরা লাগানো যাবে না বলে জানিয়েছে পর্ষদ। পরিবহণ, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য দফতরকে নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে বৈঠকও হয়েছে। সমস্ত পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে বলা হয়েছে।
কালনায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৯১৩০ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৩৫৬৬ জন এবং ছাত্রী ৫৫৬৪ জন। পরীক্ষা হবে ২০টি কেন্দ্রে। কালনার মহকুমাশাসক সুরেশকুমার জগত বলেন, ‘‘ট্রেজারি ভবন এবং তিনটি থানা থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্দিষ্ট সময় প্রশ্ন পৌঁছবে। শারীরিক ভাবে অক্ষম পরীক্ষার্থীদের একতলা ভবনে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। গরমে যাতে পানীয় জলের সমস্যা না হয়, তার জন্য প্রতিটি ঘরে থাকবে জলের ব্যবস্থা।’’ উচ্চমাধ্যমিক কাউন্সিলের জেলা উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য দেবব্রত মণ্ডল জানান, পরীক্ষা যাতে নির্বিঘ্নে হয়, তার জন্য মহকুমাশাসকের দফতরে বৈঠক হয়েছে। অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপ যেহেতু রয়েছে, সেহেতু ছাত্রছাত্রীদের আবেদন করা হয়েছে মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার নিয়ে আসার। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। বাস চলাচল, পুলিশের উপস্থিতি, স্বাস্থ্য দফতরের দলও থাকবে। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা বেশ কেন, তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মন্তেশ্বরের মালডাঙা রাজেন্দ্র মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশনে এবং মালডাঙা কাদম্বিনী বালিকা বিদ্যালয়ে এ বার পরীক্ষায় বসছে ৫৭৫ জন। যার মধ্যে ছাত্র ২৫৬ জন, ছাত্রী ৩১৯ জন। মালডাঙা রাজেন্দ্র মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক শুভাশিস পাত্র বলেন, ‘‘মাধ্যমিক পেরনো বহু ছাত্র ভিন্৩ রাজ্যে কাজে চলে গিয়েছে। আমরা গ্রামে গ্রামে ঘুরেও অনেককেই স্কুলে আনতে পারিনি। স্কুলছুটের কারণে এ বার ছাত্রের সংখ্যা কমেছে বলে মনে হচ্ছে।’’ কালনা শহরের মহারাজা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষের আবার দাবি, ‘‘মাধ্যমিকের পরে এক শ্রেণির ছাত্রদের মধ্যে পড়াশোনা করে কোনও লাভ হবে না, এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। তারা বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়ে পড়ছে। আমার ধারণা, সেই কারণেই পরীক্ষায় ছাত্রের সংখ্যা কমেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আরও পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে।’’ আবার ‘গাছমাস্টার’ হিসেবে পরিচিত, পূর্বস্থলীর নাদনঘাট রামপুরিয়া স্কুলের শিক্ষক অরূপ চৌধুরীর কথায়, ‘‘কন্যাশ্রী প্রকল্পে ছাত্রীরা আর্থিক দিক দিয়ে খুবই উপকৃত। করোনাও এ ক্ষেত্রে কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। ফলে ছাত্রীদের সংখ্যা বেড়েছে।’’